ভাষা মতিনের জীবনাবসান

অষ্টআশি বছরের জীবনের শেষ পর্যন্ত সাম্যবাদের লড়াই চালিয়ে চিরবিদায় নিলেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আবদুল মতিন, সারা বাংলাদেশ যাকে চেনে ভাষা মতিন নামে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2014, 04:30 AM
Updated : 8 Oct 2014, 06:27 PM

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা মতিন। গত ৪ অক্টোবর থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

বুধবার সকাল ৯টায় লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে সেখানেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আফজাল হোসেন।

সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় মতিনের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে।

দুই মেয়ের বাবা আবদুল মতিন পরিবারের সঙ্গে থাকতেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। তার জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার ধুবলিয়া গ্রামে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই নিজের দেহ তিনি দান করে দিয়ে গেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের  শিক্ষার জন্য, চোখ দান করে গেছেন সন্ধানীকে।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “জাতি ভাষা আন্দোলনের একজন জীবন্ত কিংবদন্তীকে হারালো।”

শোক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “দেশের স্বাধীনতার সোপান রচনা হয় ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। আর ভাষা মতিন সেই আন্দোলনের অন্যতম সংগ্রামী। তার মৃত্যু একটি জীবন্ত ইতিহাসের অবসান।”

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শোক জানিয়ে বলেছেন, দেশ একজন আস্থার দিশারীকে হারাল।

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাষা মতিনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।

এই ভাষা সৈনিকের স্ত্রী গুলবদন নেছা মনিকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মতিনের ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুর পরপরই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী তার কর্নিয়া সংগ্রহ করে। পরে তার দেহ হস্তান্তর করা হবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে।

১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে ভাষার দাবিতে বাঙালির আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন আবদুল মতিন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১৯৪৫ সালে। ভাষা আন্দোলনের পর তিনি ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতি হন। এরপর কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন।

১৯৫৪ সালে পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হন মতিন। মওলানা ভাসানী ‘ন্যাপ’ গঠন করলে তিনি ১৯৫৭ সালে তাতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে মতিন ‘পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল ) গঠন করেন।

চীনকে অনুসরণকারী বামপন্থি দলগুলোর নানা বিভাজনের মধ্যেও আবদুল মতিন সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

২০০৬ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে হায়দার আকবর খান রনোর নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠন) গঠিত হলে আবদুল মতিন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। সর্বশেষ বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি।

ভাষা আন্দোলন বিষয়ে তার রচিত বিভিন্ন বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বাঙালী জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন’, ‘ভাষা আন্দোলন কী এবং কেন’ এবং ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’।

এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘জীবন পথের বাঁকে বাঁকে’।