খালেদা জিয়ার সময়ের আবেদনে সোয়া পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের দুই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছে আদালত।
Published : 03 Sep 2014, 01:18 PM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বুধবার শুনানি শেষে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১০ সেপ্টেম্বর নতুন দিন রাখেন।
রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ঢাকা তৃতীয় মহানগর বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার এই বিচার চলছে।
সাক্ষ্যগ্রহণের দিন থাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ পরিচালক হারুনুর রশিদ খান বুধবার সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত হন।
কিন্তু উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকার কথা বলে খালেদার আইনজীবীরা সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত করে সময়ের আবেদন জানালে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে যায়।
খালেদার পক্ষে শুনানি করেন তার উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মিয়া ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন।
অন্যদিকে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মোশাররফ হোসেন কাজল।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এ দুটি মামলায় গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠন করে আদালত।
এর মধ্যে এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদা ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জন এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো তিনজন আসামি হিসাবে রয়েছেন।
খালেদা বেলা ১টা ১২ মিনিটে আদালতে প্রবেশের পর বিচার কক্ষে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকেন। বিচারক বাসু দেব রায় খাস কামরা থেকে এজলাসে আসার পর খালেদা জিয়াকে নির্ধারিত চেয়ারে বসতে বলেন।
এরপর বিএনপি প্রধানের সময়ের আবেদনের শুনানি শুরু হয় এবং বিচারক দুই পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন।
২২ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম চলার পর বিচারক ১০ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন দিন ঠিক করে দিয়ে আদালত মুলতবি ঘোষণা করেন।
আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ দুই মামলার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের আবেদন রয়েছে।এ দুটি বিষয় সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন বলে বিচারক আজকের সাক্ষ্য শুনানি মুলতবি করে নতুন তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন।”
খালেদার আইনজীবী দাবি করেন, মামলা দুটি ‘ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’।
“বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে হেয় প্রতিপন্ন করতে সরকার এই মামলা দুটি করেছে।”
এর আগে গত ২৭ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন থাকলেও খালেদা না আসায় এবং তার আইনজীবীদের সময়ের আবেদনে সেদিন শুনানি পিছিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর দিন রাখেন বিচারক বাসুদেব রায়।
ওইদিনই তিনি খালেদাকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার আসার খবরে নেতাকর্মীরা দুপুরে আলীয়া মাদ্রাসা সড়কের দুই পাশে জড়ো হয়ে শ্লোগান দিতে থাকে। বিএনপিপন্থি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমীনুল হক, এ জে মোহাম্মদ আলী, মীর নাসির উদ্দিন, জয়নুল আবেদিন, জিয়াউর রহমান খান, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া, খোরশেদ আলমসহ শতাধিক আইনজীবী শুনানিতে উপস্থিত হন।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, ওসমান ফারুক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিব উন নবী খান সোহেলও আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আদালত ও আশেপাশের এলাকায় সকাল থেকেই বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার পাশাপাশি প্রবেশ পথে বসানো হয় আর্চওয়ে।
নিরাপত্তার স্বার্থে চকবাজার থেকে বকশীবাজার পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেন।
এর মধ্যেও খালেদা গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে যাওয়ার পর বিএনপিকর্মীরা আদালতের বাইরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজধানী বাদে সারাদেশে বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
মামলা বৃত্তান্ত
২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী,
হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক
জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে।
এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে। বাকি দুজন পলাতক।
গত ১৯ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে ‘জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট’ ও ‘জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট’ দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের পর তার বৈধতা ও অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যান খালেদা।
সেখানে তার আবেদন খারিজ হওয়ার পর বিষয়টি আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
এ দুই মামলা হওয়ার পর তা বাতিল চেয়েও হাই কোর্টে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তার আবেদন খারিজ হওয়ার পর তা আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।