লঞ্চ উদ্ধার হয়নি, অভিযান সমাপ্ত

মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় কয়েকশ যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির আট দিন পরও নৌযানটির অবস্থান সনাক্ত করতে না পারায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2014, 05:26 AM
Updated : 11 August 2014, 01:48 PM

জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল সোমবার বেলা ১১টায় মাওয়ায় ডাক বাংলোয় এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “বাস্তবতা বিবেচনা করে, সময় বিবেচনা করে, নদীর পরিস্থিতি ও আবহাওয়া- সব কিছু বিবেচনা করে আমরা মনে করছি, লঞ্চ সনাক্তকরণ তৎপরতা আর চালানোর কোনো অবকাশ নাই।  চালানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বা চালালে ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যাবে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না।

“তাই এই লঞ্চ সনাক্তকরণ তৎপরতা আমরা স্থগিত ঘোষণা করছি।  অন্যান্য কার্যক্রম- লাশ খোঁজা ইত্যাদি অব্যাহত থাকবে। ”

ঈদ ফেরত যাত্রীদের চাপের মধ্যে গত ৪ অগাস্ট মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া ঘাটে আসার পথে ডুবে যায় এমএল পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি।

নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও জেলা প্রশাসন ওই লঞ্চে আড়াই শতাধিক যাত্রী থাকার কথা বললেও স্থানীয় পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারপাওয়া যাত্রীদের ভাষ্য অনুযায়ী, পিনাকে যাত্রী ছিল সাড়ে তিনশর মতো।  

দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনতা ও পুলিশ ঘাটের স্পিডবোটে করে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সে সময় আনুমানিক ১১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

এরপর ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্স, কোস্ট গার্ড, বিআইডব্লিউটিএ, নৌবাহিনী ও  চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের লোকবল ও নৌযান নিয়ে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়।  প্রশাসনের ভাষায় ‘সবচেয়ে শক্তিশালী প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে তল্লাশি চালানো হয় নদীর ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায়।

কিন্তু পিনাকের অবস্থান চিহ্নিত করতে না পারায় এই আট দিন মাঝ পদ্মায় বেকার বসে থাকতে হয় উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ও নির্ভীককে। 

জেলা প্রশাসক বলেন, “আমাদের যা করা সম্ভব ছিল, সরকারের তরফ থেকে, প্রশাসনের তরফ থেকে, জনগণের তরফ থেকে সবই আমরা করার চেষ্টা করেছি। দুর্ভাগ্য লঞ্চটিকে আমরা উদ্ধার করতে পারিনি। ”

তিনি জানান, লঞ্চডুবির পর আট দিন পেরিয়ে যাওয়ায় নিহতদের লাশ নষ্ট (ডিকম্পোজড) হয়ে গেছে।  সনাক্ত না করতে পেরে ১৫টি লাশ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মাদারীপুরে দাফন করা হয়েছে।

“সব কিছু বিবেচনায় রেখেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।  পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ভাটি অঞ্চলের জেলাগুলোর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নৌটহল জোরদার করবে।  একটি লাশ  পাওয়া গেলেও সেটি মাদারীপুরে পাঠাব। যদি সনাক্ত করা সম্ভব হয়, আমরা  স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করব।  এই কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকবে।”

সাইফুল হাসান বাদল জানান, ঘটনাস্থল থেকে ভাটির দিকে বিভিন্ন নদীতে ভেসে ওঠা মোট ৪৬টি লাশ এ পর্যন্ত উদ্ধার করা গেছে। এর মধ্যে সনাক্ত হয়েছে ২৮টি লাশ, যেগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।   

সনাক্ত না হওয়া ১৮টি লাশের মধ্যে ১৫টি দাফন করা হয়েছে।  স্বজনদের পাওয়া অভিযোগ যাচাই বাছাই করে স্থানীয় প্রশাসনের হিসাবে নিখোঁজ রয়েছে এখনো ৬১ জন

লঞ্চ সনাক্ত কর্যক্রম শেষ হলেও উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম বা নির্ভীককে স্থায়ীভাবে মাওয়ায় রেখে দেয়া  হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।

“মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মাওয়া দিয়ে দক্ষিণ বাংলার ২১টি জেলার লাখ লাখ লোক পারাপার হয়। আমরা মনে করছি, এখানে সব সময় স্থায়ীভাবে একটি উদ্ধার যানকে মোতায়েন রাখব।”

 

শনিবার উদ্ধারকর্মীদের সোনার স্ক্রিনে দুর্ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার ভাটিতে নদীর তলদেশে একটি ‘ধাতব বস্তুর’ সন্ধান পাওয়া যায়। দৈর্ঘ্যে পিনাকের প্রায় সমান হওয়ায় উদ্ধার অভিযানে আশা জাগিয়ে তোলে ধাতব বস্তুটি।  

কিন্তু তীব্র স্রোত আর ঢেউয়ের কারণে দুই দিনেও সেখানে ডুবুরি নামাতে না পেরে রোববার বন্দর কর্তৃপক্ষের সার্ভে ভেসেল জরিপ-১০ ও টাগ বোট কাণ্ডারি-২ কে সেখানে রেখে অন্য সব সংস্থার সব নৌযান প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

রোববার দুপুরে মাওয়া ঘাটে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক নৌযান প্রত্যাহারের কারণ হিসাবে নদীর তলদেশের ধাতব বস্তুটির বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার কথা বললেও উদ্ধার অভিযান গুটিয়ে আনা হচ্ছে বলে সে সময়ই গুঞ্জন শুরু হয়। 

এর ২৪ ঘণ্টার মাথায় আরেক সংবাদ সম্মেলনে তল্লাশি স্থগিত করার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক। 

তিনি বলেন, “স্থানীয়রা মিলে এখনো সনাতন পদ্ধতিতে নৌকা থেকে দড়ি ফেলে সার্চ করছেন। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, কেউ যদি লঞ্চটি সনাক্ত করতে পারেন, আমাদের স্ট্যান্ডবাই যে উদ্ধারকারী জাহাজ আছে, প্রয়োজনে অন্য ইকুইপমেন্ট এনে হলেও লঞ্চ উদ্ধার করা হবে।”

সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাইফুল হাসান বাদল বলেন, “যার যার অবস্থান থেকে যদি আমরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করি, আমরা আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে এভাবে দুর্ঘটনায় পড়ে আমাদের কোনো মা, আমাদের কোনো বোন, আমাদের কোনো ভাইকে আর আমরা হারাব না।”