সরকারি কর্মকর্তাদের ‘পারতপক্ষে’ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেককে চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
Published : 06 Mar 2014, 06:31 PM
তারপরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হলে তার একটি নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি সর্বোচ্চ কতো বছর বয়স পর্যন্ত এ সুযোগ দেয়া হবে- সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর তাগিদ দিয়েছেন সরকারের প্রভাবশালী এই মন্ত্রী।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৬০ জন সরকারি কর্মকর্তা অবসরের বয়স পার হওয়ার পরও সচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্বে রয়েছেন। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে এসব বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী, যার একটি অনুলিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।
‘সরকারি কর্মকর্তাদের অবসরান্তে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য নীতিমালা’ শিরোনামে ওই চিঠিতে বলা হয়, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, অতি অধুনা সরকার অবসরের বয়স বাড়িয়েছে এবং সেটা মনে রেখে পারতপক্ষে অবসরান্তে চুক্তিভিত্তিক চাকুরি পরিহার করতে হবে।”
গত ১ মার্চ পাঠানো ওই চিঠির বিষয়বস্তু স্পষ্টভাবে উপস্থাপনের জন্য বুধবার জনপ্রশাসন সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্থমন্ত্রী চিঠিতে যেসব বিষয়ের কথা তুলে ধরেছেন, তার কয়েকটি বিষয়ে শিগগিরই পদক্ষেপ নেয়া হবে।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। আর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়স এক বছর বাড়িয়ে করা হয় ৬০ বছর।
এরপর সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার বয়সসীমাও বাড়ানোর দাবি উঠলে সে সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ আপাতত নেই।
সাধারণত অবসরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর কর্মকর্তাদের একই পদে অথবা অন্য কোনো দায়িত্বে এক বা দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। এসব নিয়োগের মেয়াদ পরে বাড়ানোও হয়। কয়েক বছর আগে অবসরে গেছেন- এমন কর্মকর্তাদেরও একইভাবে নিয়োগ দিয়ে সরকারি চাকরিতে ফেরানোর নজির রয়েছে।
এ ধরনের নিয়োগ পরিহার ‘নীতিগতভাবে অত্যন্ত যৌক্তিক’ বলে চিঠিতে মত দিয়েছেন মুহিত।
তিনি বলেন, “সচরাচর অবসরের পরে চাকরির মেয়াদ বাড়ালে কর্মকর্তাদেরও অসুবিধা হয়। কারণ তখন তাদের কোনো দলের সদস্য বলে অপবাদ দেয়া হয়।”
তারপরও অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু কর্মকর্তাকে পুনঃনিয়োগ দিতে হয় মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী এসব বিষয়ে তার সুপারিশ তুলে ধরেন।
“আমার প্রস্তাব হবে যে, জনপ্রশাসন বিভাগ এ বিষয়ে একটি সমীক্ষা প্রণয়ন করে দেখবে যে, বর্তমান ছয় মাস এবং পরবর্তী ছয় মাসে কি ধরনের অবসর গ্রহণের সুযোগ রয়েছে এবং সরকারের দক্ষতা ও মান রক্ষার জন্য ভবিষ্যতটি কেমন দেখাবে।”
অর্থমন্ত্রী মনে করেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সহায়তা করতে অন্য বিভাগও তাদের অবস্থা জানাতে পারে।
মুহিতের প্রস্তাব, কোনো অসম্পূর্ণ কাজ (যেমন বাজেট প্রণয়ন) শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবসরের পর ছয় মাস পর্যন্ত চাকরিতে বহাল রাখা যেতে পারে। বিভাগের দক্ষতা বজায় রাখার জন্য বিশেষ ক্ষেত্রে কিছু কর্মকর্তাকে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।
এছাড়া কোনো কর্মকর্তাকে অবসরের পরেও সরকার ব্যবহার করতে চাইলে তাকে ‘ক্যাডার বহির্ভূত বিশেষ পদে’ (কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা উপদেষ্টা পরিষদে) নিযুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
“আর একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, কোনো ব্যক্তিকে সরকারি চাকুরিতে সর্বোচ্চ কত বছর বয়স পর্যন্ত (অবসরের পরও) সুযোগ দেয়া যেতে পারে।”
ইসমত আরা সাদেককে লেখা চিঠির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, জনপ্রশাসন সচিব এবং অর্থ সচিবকে দেয়া হয়েছে।