৫ জানুয়ারিতে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে গঠিত শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ‘স্বাভাবিক’ নয় বলে বক্তব্য এসেছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনার কাছ থেকে।
Published : 11 Feb 2014, 10:25 PM
মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি দুই দেশের সরকারের সম্পর্ক নিয়ে ওয়াশিংটনের এই অবস্থান সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
তবে বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্র অক্ষুণ্ন রাখার ‘স্বার্থে ’ বর্তমান সরকারের সঙ্গে ওয়াশিংটন কাজ করে যাবে বলে জানান মজীনা।
সেই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘সঙ্কটের’ বলে মন্তব্য করে তা থেকে উত্তরণে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত, যে দাবি দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটকারী বিএনপিও জানিয়ে আসছে।
বিএনপির বর্জনের মধ্যে গত ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
ভোটের আগে থেকে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা ঢাকা সফরের সময়েও তৎকালীন সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানিয়ে আসছিল।
নির্বাচনের আগে তৎপরতার জন্য ড্যান মজীনার সমালোচনাও করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
তার এই তৎপরতা ‘বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যের’ মতো বলেও মন্তব্য এসেছে ভারতীয় কূটনীতিকের মুখ থেকে। বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কে চিড় ধরার কথাও প্রকাশিত হয় ভারতের গণমাধ্যমে।
দশম সংসদ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে এর মাধ্যমে গঠিত সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দাবি করে আসছেন খালেদা।
তার সঙ্গে গুলশানের কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর মজীনা সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমান সঙ্কট উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ চায়।”
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটিতে এক শুনানি চলছে।
ওই শুনানিতে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের বক্তব্যই খালেদার কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান মজীনা। নিশা বিসওয়ালও ঢাকা সফর করে গিয়েছিলেন।
মজীনা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমান সরকারের মিথষ্ক্রিয়া স্বাভাবিকের চাইতে কম। তবে বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্র জোরদার করতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”
মজীনা বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের ‘আকাঙ্ক্ষার’ প্রতিফলন ঘটেনি, এটা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ছিল।
সেই সঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে তা বন্ধ করার কথাও বলেন রাষ্ট্রদূত।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে গত ৩১ ডিসেম্বর গুলশানের বাসায় গিয়ে খালেদার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মজীনা। ভোটের পর এটাই ছিল তাদের প্রথমৈ বৈঠক।
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে খালেদার সঙ্গে ছিলেন দলের সহসভাপতি ও ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী, দুই উপদেষ্টা ওসমান ফারুক ও রিয়াজ রহমান।
শমসের মবিন সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন রাষ্ট্রদূতকে স্পষ্টভাষায় বলেছেন, বর্তমান তথাকথিত সরকারের প্রতি এদেশের মানুষের কোনো আস্থা নেই।
“তারা জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। একই অবস্থা সংসদেরও। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি।”
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে শিগগিরই সংলাপ হওয়ার প্রয়োজনের কথা রাষ্ট্রদূতের কাছে তুলে ধরেন খালেদা।
“দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও অনিশ্চয়তা দূর করতে এটি জনগণের দাবি,” বলেন তিনি।
২০০৭ সালে উইকিলিকসে প্রকাশিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যার তারেক রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রের সফরে বাধার সুপারিশ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মজীনা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।