বর্ধিত ফি ও সান্ধ্য কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগকর্মীদের দফায় দফায় হামলার পর উত্তেজনার মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
Published : 02 Feb 2014, 05:08 PM
রোববার দুপুরে হামলার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলে রাতে জরুরি সভায় বসে সিন্ডিকেট।
এতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পাশাপাশি সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের সব হল খালি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপউপাচার্য অধ্যাপক সারওয়ার জাহান সজল।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হল ত্যাগ করবে।”
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে বৈঠকে বসে গত তিন দিন ধরে ধর্মঘট চালিয়ে আসা ‘বর্ধিত ফি ও সান্ধ্য কোর্স বিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ’।
এরপর ফোরামের সমন্বয়ক আয়াতুল্লাহ খোমেনী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেছেন।
“তবে বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই সান্ধ্য কোর্স বাতিলের দাবিতে পুনরায় আন্দোলন চলবে।”
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান, আইন ও কলা অনুষদের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স চালু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ফি দুই থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এরপর গত ১৬ জানুয়ারি থেকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন বৃহস্পতিবার ধর্মঘটে গড়ালে শনিবার উপাচার্য বর্ধিত ফি স্থগিতের ঘোষণা দিলেও তা প্রত্যাহার দাবিতে আন্দোলনে অটল থাকার কথা জানায় শিক্ষার্থীরা।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে খন্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে জড়ো হওয়ার পর সকাল ৯টার দিকে পুলিশ তাদের মাইক কেড়ে নেয়।
এরপর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কাছে জড়ো হয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নিলে বেলা পৌনে ১২টার দিকে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান রানার নেতৃত্বে একটি মিছিল এসে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগকর্মীরা। এ সময় অস্ত্র হাতে তাদের গুলিও ছুড়তে দেখা যায়। পুলিশের রবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাসে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
উপাচার্য অধ্যাপক মিজান উদ্দিনের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের ওই সভায় রোববার সংঘটিত ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করার সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে অধ্যাপক সারওয়ার জানান।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক খালেকুজ্জামানকে সভাপতি করে গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন- রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সিন্ডিকেট সদস্য ইব্রাহিম হোসেন, ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক অধ্যাপক এন্তাজুল হক।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে সিন্ডিকেটে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের করার কথা জানিয়েছে।
বাণিজ্য অনুষদের ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে সিন্ডিকেটে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।”
তদন্ত কমিটি ও ডায়েরি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে করা হবে কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “যারা কয়েকদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্যকর পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।”
অধ্যাপক আমজাদ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দিলেও ‘বর্ধিত ফি ও সান্ধ্য কোর্স বিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ’র অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদেই ছাত্রলীগকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়।
হামলার পর শিক্ষার্থীরা বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সমাবেশে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান রানা অবশ্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দুপুরে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি।”