বহুল আলোচিত সংশোধিত শ্রম আইন পাস হয়েছে সংসদে।
Published : 15 Jul 2013, 02:05 PM
বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের অনুপস্থিতিতে সোমবার কণ্ঠভোটে এই সংক্রান্ত বিল পাস হয়।
তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিকের পর সাভারে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির পর আন্তর্জাতিক মহলের অসন্তোষের মুখে শ্রম আইনে এই সংশোধন আনা হল।
বাংলাদেশের কারখানায় শ্রম পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছে।
আইন সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে তুলে শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু বলেছেন, “আইনটি পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের স্থগিত করা জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে।”
এই আইন সংশোধনের ফলে শ্রমিকদের দীর্ঘ দিনের দাবিও পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
তবে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় নয়, মালিকদের স্বার্থেই এই আইন সংশোধন হচ্ছে।
শ্রমমন্ত্রী সংসদে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০১৩’ উপস্থাপনের পর সংসদ সদস্য মেনন জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করলেও মন্ত্রী তা গ্রহণ করেননি।
অনুপস্থিত থাকায় বিরোধীদলীয় সদস্যদের আনা জনমত যাচাই-বাছাই প্রস্তাবও সংসদে উত্থাপিত হয়নি।
তবে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু ও আওয়ামী লীগের জুনায়েদ আহমেদ পলকের ১২টি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করেন রাজিউদ্দিন।
বিলের ওপর আলোচনায় তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব বলে শ্রম আইন সংশোধনে এই বিলটি আনা হয়েছে। এই বিলের ওপর জনমত যাচাইয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ অনেক আলাপ-আলোচনার পর বিলটি আনা হয়েছে।
তিনি বিরোধী দলের সমালোচনা করে বলেন, ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আইনটি পাসের সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৫৬টি সংশোধনী প্রস্তাব দেয়া হলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। বরং সে সময় শ্রমিকদের হত্যা-নির্যাতন চালানো হয়।
“আর এখন তাদের একজন হেফাজতের আমির শফী গার্মেন্টস শিল্পে নারীদের কাজ না করার ছবক দিচ্ছেন। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী জিএসপি বাতিলের সুপারিশ করছেন।”
সংশোধিত আইন অনুযায়ী, কেউ নয় মাস কোনো কোম্পানিতে চাকরি করলে তিনি প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
প্রধান কারখানা পরিদর্শককে কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের নকশা অনুমোদনের ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে।
নতুন আইনে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমিকদের জন্য ‘গ্রুপ বীমা’র বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১০০ জন শ্রমিক রয়েছে, তাদের বাধ্যতামূলক বীমা করার বিধান রাখা হয়েছে।
বীমার বিষয়ে নতুন আইনে বলা হয়েছে, শ্রমিকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বীমা দাবি আদায় মালিকের দায়িত্ব হবে এবং মালিক ওই বীমা দাবি থেকে আদায় করা অর্থ পোষ্যদের সরাসরি দেবেন অথবা শ্রম আদালতে পাঠাবেন।
যে সব প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার বা এর বেশি শ্রমিক কাজ করে, সেসব প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনার ব্যবস্থা নিতে হবে। পেশাগত রোগে আক্রান্ত শ্রমিকদের সুস্থ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত মালিকের দায়িত্বে চিকিৎসার বিধান রাখা হয়েছে।
সংশোধিত আইনে প্রসূতি কল্যাণে বাধা দেয়া মালিকের অর্থদণ্ড ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, অনুমোদিত কারখানা ভবনের নকশার সঙ্গে কারখানার মেশিন স্থাপনের নকশার কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন ঘটানো যাবে না।
কাজ চলার সময় প্রতিষ্ঠানের বাইরে যাওয়ার কোনো দরজা বন্ধ বা বাধাগ্রস্ত করা যাবে না বলেও আইন করা হয়েছে।
শ্রমিকরা যে পরিবেশে কাজ করবে সেই পরিবেশের জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় শ্রমিক নিয়োগে 'আউট সোর্সিং' কোম্পানিগুলোর জন্য নিবন্ধনের বিধান রেখে এই আইন সংশোধন হয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ করা শ্রমিক শ্রম আইনের আওতাভুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী ধরনের কাজে কোনো রূপ অস্থায়ী ধরনের অর্খাৎ সাময়িক, দৈনিক ভিত্তিক ও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ দেয়া যাবে না।
এছাড়া শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে দেয়ার সুবিধার বিধান রাখা হয়েছে।
রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল করার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে।
নতুন আইনে জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙ্গা, ওয়েল্ডিং, মোবাইল অপরেটর কোম্পানি, বেসরকারি রেডিও, টিভিসহ লাভের জন্য পরিচালিত হাসপাতালের শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি শ্রমিকদেরও যোগ করা হয়েছে।