আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামিদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2013, 11:15 PM
Updated : 22 April 2013, 04:06 AM

৬৯ বছর বয়সী এই আইনজীবী কিশোরগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাতবার, স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন দুই দফা। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনিই দেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সোমবার সকালে একমাত্র প্রার্থী আবদুল হামিদকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।

নতুন রাষ্ট্রপতি আগামী পাঁচ বছর অর্থাৎ পরবর্তী সরকার আমলেও রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকবেন।

সিইসি বলেন, “একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় আবদুল হামিদকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করছি।”

পরে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার সঙ্গে সংসদের স্পিকার পদ ও কিশোরগঞ্জ-৪ আসন শূন্য হয়ে যাবে বলে জানান সিইসি।

গেজেট প্রকাশের পর সংসদ সচিবালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বঙ্গভবনে হবে নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়ানোর আয়োজন।

১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে, ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে চলতি বছর আব্দুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।

সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের  ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর  ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ।

আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।

দেশের ১৯ তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের অসুস্থতার কারণে গত ১১ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান আবদুল হামিদ।

জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর  নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে, যাতে ২৯ এপ্রিল সংসদে ভোটের দিন রাখা হয়। তবে প্রার্থী মাত্র একজন হওয়ার ভোটাভুটির প্রয়োজন হয়নি। 

রোববার মনোনয়নপত্র দাখিলের ধার্য দিনে জাতীয় সংসদ ভবনে  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে আবদুল হামিদকে প্রার্থী মনোনীত করা হয়।

সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় কার্যত তখনি আবদুল হামিদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়।

রাষ্ট্রপতি প্রার্থীরর মনোনয়নপত্রে সই করছেন আবদুল হামিদ, পাশে শেখ হাসিনা।

জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে আসা আবদুল হামিদ সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার পাশে বসেই রোববার দুপুরে মনোনয়নপত্রে সই করেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতারা তা কমিশনে জমা দেন। 

মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “আবদুল হামিদ যোগ্য ব্যক্তি এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মহল বক্তব্য-বিবৃতিতে তার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে।”

এই বিষয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনার পর এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবো।”

জিল্লুর রহমানের প্রতি আস্থা দেখানো বিএনপি নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে মনোনীত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।

তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও স্পিকার হিসেবে আবদুল হামিদের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তারা করে আসছিলেন; যদিও হামিদ বরাবরই বলে আসছিলেন, স্পিকার হিসেবে নিরপেক্ষ ভূমিকায় রয়েছেন তিনি। 

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯ মেয়াদে ১৬ জন রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। সেই হিসোবে আবদুল হামিদ হচ্ছেন দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি।

১৯৯১ সালের পর আবদুর রহমান বিশ্বাস ছাড়া অন্য সব রাষ্ট্রপতিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।