ঢাকা, অগাস্ট ১৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের সহকারী একান্ত সচিব ওমর ফারুক তালুকদার এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহা ব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কমিশনের দুই কর্মকর্তা মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর রমনা থানায় এ দুটি মামলা দায়ের করেন বলে ওসি শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
এর আগে সকালে কমিশন কার্যালয়ে মাসিক বৈঠক শেষে দুদক সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে ইউসুফ মৃধার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৪০ লাখ ৯ হাজার ৯১০ টাকা এবং ওমর ফারুকের এক কোটি তিন লাখ ৯৭ হাজার টাকার সন্ধান পেয়েছে দুদক।
“এ তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন,” বলেন তিনি।
তবে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ না থাকায় পূর্ব রেল পুলিশ সাবেক প্রধান এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
রমনার ওসি শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এসএম রাশেদুল রেজা।
এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ফারুক তার ৫০ লাখ ৯৩ হাজার টাকার স্থাবর এবং ১ কোটি ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের যে বিবরণী দিয়েছেন তাতে ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করা হয়েছে। এছাড়া তার নামে ১ কোটি ৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে, যা তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের কারেন দুদকের উপ সহকারী পরিচালক রেজাউল হাসান।
এই রেল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ২১৯ টাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য দিলেও ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৯১০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়া জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৪০ লাখ ৯ হাজার ৯১০ টাকার সম্পদ অর্জন করে নিজের দখলে রেখেছেন।
গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের ফটকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত সহকারী ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে বিপুল অর্থ পাওয়ার খবর প্রকাশের পর তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ফারুকের সঙ্গে সেদিন ৭০ লাখ টাকা পাওয়া যায়, যা রেলে নিয়োগে ঘুষ হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। রেলের জিএম ইউসুফ এবং কমান্ড্যান্ট এনামুল হকও ওই গাড়িতে ছিলেন।
দুদক সচিব কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ওই রাতে ফারুকের ব্রিফকেসে থাকা ৭০ লাখ টাকা ধরেই সম্পদ বিবরণী তৈরি করা হয়েছে। তবে এ টাকা তিনি কার কাছ থেকে পেয়েছেন এবং কোথায় নিয়ে যাচ্ছিলেন সে সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
“এ টাকার মালিক তিনি এবং নিজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন ওমর ফারুক। তবে নিজস্ব এ অর্থের কোনো উৎস তিনি দেখাতে পারেননি।”
এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করা হবে বলে ফয়জুর রহমান চৌধুরী জানান।
তিনি বলেন, “যারা দুর্নীতি করে তারা সাধারণত নিজের নামে অর্থ জমা রাখে না। স্ত্রী, ভাই-বোনের নামে টাকা জমা রাখে। আমাদের অনুসন্ধান চলবে। আশা করি খুব দ্রুতই এ বিষয়ে তথ্য বেরিয়ে আসবে।”
ওমর ফারুকের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা রেলওয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কোনো কথা বলবো না। তদন্ত শেষ হলে আপনারা জানতে পারবেন।”
তিনি বলেন, ওমর ফারুকের গাড়ি চালক আলী আযম এই মামলার একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতো। তদন্ত কাজেও সহায়তা হতো।
“কিন্তু আযম কোথায় সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিতে পারেনি। আশা করছি দ্রুতই তারা আযমের সন্ধান দিতে পারবে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসডব্লিউ/এলএইচ/কেটি/এমডি/এএইচ/জেকে/১৭২০ ঘ.