চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর বহু প্রতীক্ষিত তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুসহ চারটি প্রকল্প উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার চট্টগ্রাম আসছেন।
তিনি কর্ণফুলী সেতু ছাড়াও ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার শিকলবাহা পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং নতুন আদলত ভবনের উদ্বোধন করবেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী পশ্চিম পটিয়ায় একটি দলীয় জনসভা এবং আদালত ভবনে আইনজীবী ও চট্টগ্রামের সুধী সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরকে সামনে রেখে নতুন রূপে সেজেছে বন্দরনগরী ও এর উপকণ্ঠের পশ্চিম পটিয়ার শিকলবাহা। নেওয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেলা পৌনে বারটায় নগরীর উপকণ্ঠে পশ্চিম পটিয়ার শিকলবাহায় ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের উদ্বোধন শেষে সিডিএ আবসিক এলাকা সংলগ্ন মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নেবেন।
জনসভা শেষে দুপুর সোয়া একটায় শেখ হাসিনা তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর উদ্বোধন এবং পৌনে দুইটায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
বেলা তিনটায় চট্টগ্রাম নতুন আদালত ভবন উদ্বোধন শেষে তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন।
এর আগে এ বছরের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম সফরে গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি প্রকৌশলীদের সম্মেলনে অংশ নেওয়া ছাড়াও নগরীর বহদ্দারহাটে ছয়টি ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যার নির্মাণ কাজ এখনো শুরু হয়নি।
তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু
দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ বান্দরবান কক্সবাজারের সঙ্গে মহানগরীর সংযোগকারী এ সেতুর দাবি ছিল দীর্ঘদিনের।
দীর্ঘদিন রাজনৈতিক রশি টানাটানির পর ২০০৬ সালের অগাস্ট মাসে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এপ্রোচ সড়কের কারণে তা হয়নি।
এই সেতু নির্মাণের জন্য ২০০৬ সালের ১৯ জুলাই 'চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি'র সঙ্গে সরকারের একটি চুক্তি সই হয়।
সেতুর প্রকল্প পরিচালক বিধান চন্দ্র ধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুটি উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। সেতু নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ৫৯০ কোটি টাকা ধরা হলেও খরচ হয়েছে ৩৮০ কোটি টাকা। এতে সাশ্রয় হয় ২১০ কোটি টাকা।
এই সেতু উদ্বোধনের পর পার্শ্ববর্তী শাহ আমানত ব্রিজটি খুলে নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
চার লেন বিশিষ্ট এ সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৫০ মিটার, প্রস্থ ২৪.৪০ মিটার।এটি কেবল স্টেইড টাইপের সেত, যা বাংলাদেশে এই প্রথম।
পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট
চট্টগ্রামের শিকলবাহা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশেই নির্মিত এ কেন্দ্রে উৎপাদনের মধ্য দিয়ে জাতীয় গ্রিডে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হতে যাচ্ছে।
'ডুয়েল-ফুয়েল' পদ্ধতির (গ্যাস ও জ্বালানি দিয়ে পরিচালিত) এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রাথমিকভাবে উৎপাদনে যাবে গ্যাসের মাধ্যমে। অব্যাহত গ্যাস সংকটের কারণে এ কেন্দ্রটি দ্বৈত পদ্ধতির করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অচিরেই এটি জ্বালানির মাধ্যমে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আসাদুল্লাহ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহের জন্য এ প্ল্যান্টটি এখন সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। প্রতিদিন পিক আওয়ারে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এ কেন্দ্র।
তিনি জানান, ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন এ কেন্দ্রে ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর উপকণ্ঠে পশ্চিম পটিয়ার শিকলবাহায় পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ বছরের মার্চে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ৫৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্ল্যান্টে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় এ বছরের ২৯ জুন।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড
দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি- এই পাঁচ জেলায় গ্যাস সরবরাহের জন্য এ কোম্পানি গঠন করে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সফরকালে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এর কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
চট্টগ্রামের জন্য পৃথক কোম্পানি হওয়ায় চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের পাশাপাশি এ অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা।
নতুন কোম্পানি গঠন হলেও এখনো কেজিডিসিএল-এর সম্পদ ও দেনা নির্ধারণ (এসেট অ্যান্ড লায়াবিলিটিস অ্যাসেসমেন্ট) হয়নি। ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড (বিজিএসএল) চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করে। ১১ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করে কেজিডিসিএল।
দুই মাসের মধ্যে সম্পদ ও দেনা নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন হবে বলে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান।
কেজিডিসিএল কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি সার কারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক মিলিয়ে মোট গ্যাসের চাহিদা ৩৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট (এমসিএফ)। বর্তমানে পেট্রোবাংলা থেকে গ্যাস সরবরাহ হয় ২২৫ এমসিএফ।
নতুন আদালত ভবন
শতবর্ষের পুরনো চট্টগ্রাম আদালত ভবনের পাশেই নির্মিত হয়েছে নতুন এই ভবনটি।
পুরনো ভবনকে অক্ষুন্ন রেখেই পাশে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা এ ভবন করা হয়েছে। নতুন এ ভবন তৈরি হওয়ায় বিচার কাজ আরও সহজতর হবে বলে মনে করেন বিচারক, বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা।
২ লাখ ৪২ হাজার বর্গফুটের এ ভবনের চতুর্থ তলায় জেলা বিচারিক হাকিম ও দায়রা জজদের এজলাশ, তৃতীয় মহানগর দায়রা জজের আদালত, দ্বিতীয় তলায় মহানগর বিচারিক হাকিমের এজলাশ এবং নিচতলায় ডাকঘর, হাজত খানা, পার্কিং ও আইনজীবীদের বসার কক্ষ রয়েছে।
১৮৯২ সালে নির্মিত পুরাতন আদালত ভবনটি সংস্কারের পর এখন জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যালয় রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমসি/এইচএ/২০৫০ ঘ.