সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার টার্মিনালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে নিছক অগ্নি দুর্ঘটনা বলে মনে করছেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
Published : 07 Jun 2022, 03:50 PM
তিনি বলেছেন, “নিশ্চয় কিছু একটা ঘটেছে, তা না হলে এতগুলো প্রাণ যায় না, এটা আমি বিশ্বাস করি।”
ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত ফায়ার ফাইটার মো. শাকিল তরফদারের জানাজায় অংশ নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারও গাফিলতি (ছিল কি না), কিংবা স্যাবোটাজ, কিংবা উদ্দেশ্যমূলক (কি না) কিংবা কেউ করিয়েছে কি না, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলতে পারছি না।”
গত শনিবার রাতে চট্টগাম শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ওই কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ছুটে গিয়ে কাজ শুরু করেন। কিন্তু এরপর বড় ধরনের বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও সেখানে কিছু কিছু কন্টেইনার জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও অংশ নিচ্ছেন অগ্নি নির্বাপন ও উদ্ধার তৎপরতায়।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, প্রায় দুই ডজন কন্টেইনারে রাসায়নিক রাখা ছিল ওই ডিপোতে। রাসায়নিকের কারণেই পরিস্থিতি ভয়াবহ মাত্রা পায়।
এ ঘটনায় রোববার পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার ডিপোর পোড়া ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো দুটি ‘দেহাবশেষ’ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। নিহতদের মধ্যে অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর ৯ সদস্যের মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা জঙ্গি দমন থেকে সবক্ষেত্রে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে আসছেন এবং যে কোনো ঘটনায় সময়ক্ষেপণ না করে গিয়ে হাজির হন।”
ফায়ার সার্ভিসকে সক্ষম বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ক্রমাগতভাবে আরও সক্ষমতা বৃদ্ধি করব। অগ্নিনির্বাপণে যেন সবোর্চ্চ ভূমিকা রাখতে পারে।“
সীতাকুণ্ডের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- সেই প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আপনারা কোনোদিন দেখেছেন? প্রধানমন্ত্রী কাউকে ছাড় দিয়েছেন?
“উনি সংসদ সদস্যকেও ছাড় দেন না। কাজেই মেসেজ স্পষ্ট- যদি কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, যদি কারো গাফিলতি দেখা যায়, আর যদি কেউ স্যাবোটাজ করে থাকে, শাস্তি তাকে পেতেই হবে।”
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, “আমরা খুবই বেদনায় আছি, ফায়ার সার্ভিস ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যু।
“১২ জনকে হারিয়েছি, ৯ জনের মৃতদেহ পেয়েছি আর বাকি ৩ জনের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ওখানে রাসায়নিক আছে, তা আমরা জানতাম না। ওখানে গার্ড ছাড়া কাউকেই পাইনি আমাদেরকে কিছু বলার জন্য।”
আগুনের খবর প্রথম ৯৯৯ থেকে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এতো কর্মীর মৃত্যুর কারণ কী, এ প্রশ্নের উত্তরে মহাপরিচালক মাইন বলেন, “কারণ একটাই- অনেক গণমাধ্যমে বলেছি; আমাদের কাজ হলো ইমেডিয়েট রেসপন্স করা। যেখানে রেসপন্স টাইম ৩০ সেকেন্ড বলে থাকি, অর্থাৎ খবর পাওয়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে স্টেশন থেকে রওয়ানা দিতে হবে- বাকিটা পথে যাওয়ার সময়। ঘটনার ৫ মিনিটের মধ্যে ফায়ারের প্রথম দল পৌঁছে।
“আগুন দেখার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাসেসমেন্ট আর ফায়ার ফাইটিং- দুটিই এক সঙ্গে করা হয়। এমন নয় যে, আগে দাঁড়িয়ে কিছু সময় দেখি। ওখানে যে কেমিকেল ছিল তা আমাদের জানা ছিল না। আমি বারবার বলছি, যেহেতু জানা ছিল না, আমাদের ফায়ার ফাইটাররা কাজ শুরু করেছে এবং কিছুক্ষণ পরে একটা বিস্ফোরণ ঘটে। আমার ধারণা, প্রথম বিস্ফোরণে ফায়ার সদস্যরা নিহত হয়েছেন, বাকিটা তদন্ত... ।“
ফায়ার ব্রিগেড সদস্যদের প্রশিক্ষণের কোনো কমতি বা ঘাটতি বা অভিজ্ঞতার অভাব ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। মহাপরিচালক বলেন, এত সহকর্মীকে হারালেও পেশাগত দিক থেকে ফায়ার ব্রিগেড সদস্যদের মনোবলের কোনো ঘাটতি হয়নি।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, সীতাকুণ্ডে দগ্ধদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৯ জনকে ঢাকায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে খালেদুর রহমানের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল পজেটিভ হওয়ায় তাকে কোভিড ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া রাসেল ও এনামুল নামের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১৬ জনের মধ্যে সাতজনের অবস্থা গুরুতর এবং পাঁচজন সুস্থ হওয়ার পথে আছেন। বাকি চারজনকেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান সামন্ত লাল।