সন্তান ও জামাতা হত্যার বিচার না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়েই চলে গেলেন সাংবাদিক মেহেরুন রুনির মা নুরুন নাহার মির্জা (৬৪)।
Published : 05 Jan 2022, 04:21 PM
বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
কোভিড ও কিডনির জটিলতা নিয়ে নুরুন নাহার মাসখানেক ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
স্বজনের বরাত দিয়ে রুনির এক সময়ের সহকর্মী এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক নাদিরা কিরণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল ৮টার দিকে বিএসএমএমইউতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
“তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।”
গত ডিসেম্বরে অসুস্থ হয়ে পড়লে নুরুন নাহারকে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন।
নুরুন নাহার ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিডনি ডায়ালাইসিস শুরু করার পর তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন। এরপর ৩ জানুয়ারি তাকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হয়।
তার মরদেহ ইন্দিরা রোডের বাসার কাছের মসজিদে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে। সেখানে সাগর-রুনিকেও দাফন করা হয়।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনি।
রুনির ভাই নওশের আলম রোমান, মা নুরুন নাহার মির্জা ও ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ
দেশজুড়ে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পর সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর প্রায় ১০ বছর হতে চললেও মামলার তদন্তই শেষ হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই মো. নওশের আলম রোমানের করা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম। তার কাছ থেকে তদন্তের দায়িত্ব গিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রবিউল আলমের কাছে।
৬২ দিন পর ডিবি আদালতের কাছে ব্যর্থতা স্বীকার করলে ২০১২ সালের এপ্রিলে তদন্তের দায়িত্বে আসে র্যাব। পুলিশের এ ইউনিটেও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা তদন্তভার পেলেও এখনও তা শেষ করতে পারেনি।
এখন পর্যন্ত ৮৪ বার সময় চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে তদন্ত সংস্থা র্যাব। আগামী ২৪ জানুয়ারি পরবর্তী তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ রয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডের পর বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন নুরুন নাহার মির্জা। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পরের বছর ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ভিআইপি মিলনায়তনের নাম ‘ডিআরইউ সাগর-রুনি মিলনায়তন’ নামকরণ করা হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় নুরুন নাহার বলেছিলেন, “আপনারা মেঘের দিকে তাকান৷ সে বাবা-মা'র জন্য মাঝে মাঝে কাঁদে৷ তার দিকে তাকিয়ে হলেও সাগর-রুনি হত্যার বিচার করা হোক৷ এই ছোট্ট ছেলেটা কত কষ্ট নিয়েই না বড় হচ্ছে৷''
মেঘ এতদিন তার নানীর কাছেই ছিলেন।