পিকে হালদার ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে আরও ৩১৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ

বিদেশে পলাতক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে আরও ৩১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে উঠেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2021, 02:59 PM
Updated : 14 Nov 2021, 02:59 PM

এর মধ্যে রোববার ২৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ আলাদাভাবে পাঁচটি মামলা হয়েছে।

আরও ৮৮ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আরও দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান।

মামলাগুলোতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের কর্মকর্তা এবং বোর্ডের সদস্যরা ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে জাল রেকর্ডপত্র প্রস্তুত করে মালিকদের ঋণ পেতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন। তারা পরস্পর যোগসাজশে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ৩১৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ ও পাচার করেছেন।

আসামিরা ‘লেয়ারিংয়ের’ মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

মামলায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি মো. রাশেদুল হক, পি কে হালদারসহ নয় বোর্ড সদস্য, পি কে হালদারের আত্মীয় ও সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের আসামি করা হয়েছে বলে জানান দুদক সচিব আনোয়ার।

পাঁচ মামলায় যেসব অভিযোগ

>> এক মামলায় 'কাগুজে' প্রতিষ্ঠান জি অ্যান্ড জি এন্টারপ্রাইজের নামে ৩০ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন।

>> 'কাগুজে' প্রতিষ্ঠান তামিম অ্যান্ড তালহা ব্রার্দাস লিমিটেডের নামে ৩০ কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাতের অভিযোগে কমিশনের কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদি হয়ে আরেকটি মামলা করেন।

>> গ্রীণলাইন ডেভেলমেন্ট লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি টাকা ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। দুদক উপসহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদি হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।

>> এমটিবি মেরিন লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে আত্মসাত ও পাচারের অভিযোগে আরেটি মামলা করা হয়েছে। দুদক উপসহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান বাদি হয়ে মামলাটি করেন

>> পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ফেরদৌস রহমান বাদি হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।

এই চার কোম্পানি হল- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।

এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালিয়ে যান।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালদার তার নিজের, আত্মীয়, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার ‘বৈধ কোনো উৎস’ অনুসন্ধানে মেলেনি।

এসব অভিযোগে দুদকে আলাদা অনুসন্ধান ও তদন্ত করছেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান।

এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫টি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৫টি মামলায় আসামিদের মধ্যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক।