কানাডায় অর্থ পাচার: পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন

কাগুজে কোম্পানি খুলে নামে-বেনামে ৪২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2021, 04:06 PM
Updated : 10 Nov 2021, 04:06 PM

কমিশন বলছে, পি কে হালদার বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির নামে ১৭৮টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮১ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করছেন এবং এক কোটি ১৭ লাখ ডলার কানাডায় পাচার করেছেন বলে তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, বুধবার কমিশন সভায় এই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে আসামি করা হচ্ছে মোট ১৪ জনকে। 

পি কে হালদারের পাশাপাশি তার মা লিলাবতী হালদার, ভাই প্রিতিশ কুমার হালদার, তার সহযোগী অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রির নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।

পি কে হালদার বিদেশ পালানোর পর গত বছরের ৮ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদকে উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে ওই মামলার করার পর তাকেই তদন্তের দায়িত্ব দেয় কমিশন।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারই এ মামলার মূল আসামি। অবৈধ সম্পদ অর্জন, অবৈধ লেনদেন ও কানাডায় অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বাকি ১৩ আসামি তাকে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ আনছে দুদক।

কমিশন সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, “আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় তার নিজ নামে-বেনামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি, কাগুজে কোম্পানি, ব্যক্তিবর্গের নামে-বেনামে প্রায় ৪২৬ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

“এছাড়া বিভিন্ন নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৭৮টি হিসাবে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা জমা ও উত্তোলনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক লেনদেন এবং বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত হয়ে কানাডায় এক কোটি ১৭ লাখ কানাডিয়ান ডলার পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিগগিরই এ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।”

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।

এই চার কোম্পানি হল- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।

এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালিয়ে যান।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালদার তার নিজের, আত্মীয়, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার ‘বৈধ কোনো উৎস’ অনুসন্ধানে মেলেনি।

এসব অভিযোগে আলাদা অনুসন্ধান ও তদন্ত করছেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান।

এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫টি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৫টি মামলায় আসামিদের মধ্যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক।

আরও পড়ুন-