পি কে হালদারের ‘৬২ সহযোগীর’ খোঁজ পেয়েছে দুদক

প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারে (পি কে হালদার) অনিয়মে ৬২ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2021, 10:56 AM
Updated : 14 Jan 2021, 10:56 AM

ইতোমধ্যে তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুদক সচিব মু আনোয়ারুল হাওলাদার বলেন, হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত পি কে হালদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় এই ৬২ জনের নাম পেয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান এই অনুসন্ধান করছেন।

এক প্রশ্নে দুদক সচিব বলেন, “আসলে পি কে হালদারের বিষয়টি এখন অনেক বড়। দেখা যাচ্ছে যে, তার বিভিন্নজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে। আমরা ইতোমধ্যে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। মোটামুটি জানা গেছে ৬২ ব্যক্তির সঙ্গে তার লিঙ্ক বা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।”

প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) ফাইল ছবি

এই ৬২ জনের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা দুদক জব্দ করেছে বলে জানান আনোয়ারুল হাওলাদার।

গত বছরের জানুয়ারিতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করে দুদক। এই মামলাটির তদন্ত করছেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন।

এই মামলার তদন্তে নেমে বুধবার পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করে তিনদিনের রিমান্ডে পেয়েছে দুদক।

এক প্রশ্নে দুদক সচিব আনোয়ারুল হাওরাদার বলেন, “অবন্তিকা বড়ালকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হয়তো পরে জানা যাবে পি কে হালদারের সহযোগিতায় তার কী পরিমাণ অবৈধ সম্পদ রয়েছে।”

এর আগে মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গত ৪ জানুয়ারি পি কে হালদারের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী শংখ ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শংখ ব্যাপারীর নামে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় একটি বিলাস বহুল ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পি কে হালদারের অর্থায়নে কেনা হয়েছে বলে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান।

আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে পি কে হালদার বিদেশ পালানোর পর গত বছরের ৮ জানুয়ারি দুদক তার বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।

এই চার কোম্পানি হল- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।

এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।

এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ২৭৫ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ খবর দিয়ে মামলা করে।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালদার তার নিজের, আত্মীয়দের, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে ৬৭ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৯ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার ‘বৈধ কোনো উৎস’ অনুসন্ধানে মেলেনি।

এর মধ্যে সুখাদা লিমিটেড নামের একটি কোম্পানিতে অবন্তিকা বড়াল, প্রীতিষ কুমার হালদার এবং সুসমিতা সাহার নামে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে, যা আসলে পি কে হালদারের টাকা বলে দুদকের ধারণা।

পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারে ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। তার মা লীলাবতী হালদার এবং অবন্তিকা বড়ালসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাই কোর্ট।

আরও খবর-