চাকরি করতে গিয়ে যে ২৪ ঘণ্টাই পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হয়, সহকর্মীদের তাই বোঝালেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
Published : 08 Nov 2021, 04:16 PM
পুলিশ সদস্যদের কর্মঘণ্টা নিয়ে একটি সংবাদ প্রতিবেদন নিয়ে তিনি বলেছেন, “আপনাদের (সাংবাদিক) কি ধারণা, ডিএমপি কমিশনার দুই ঘণ্টা ডিউটি করে? আমাদের তো ঘুমের সময় নাই, খাওয়ার সময় নাই। আমরা যখন চাকরিতে আসছি, তখন জেনে, শুনে, বুঝেই আসছি।”
সোমবার অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্র্যাবের ক্রীড়া উৎসব উদ্বোধন করতে গিয়ে একথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
‘১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা ডিউটি করে একজন কনস্টেবল’- সম্প্রতি প্রকাশিত এই শিরোনামের একটি সংবাদ প্রতিবেদন নিয়ে তিনি কর্মঘণ্টার প্রসঙ্গ তোলেন।
শফিকুল বলেন, “গণমাধ্যমে মাঝে মধ্যে তথ্যের বিভ্রাট ঘটে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বেরিয়েছে যে পুলিশের সদস্যরা বিরক্ত, ১৬/১৭ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়।”
“পুলিশে চাকরি করে ৯ টু ৫টা অফিস সম্ভব না। ২৪ ঘণ্টা ডিউটির বাহিনীতে আমি ১৭ ঘণ্টা ডিউটি করছি। ২৪ ঘণ্টাই যে ডিউটি করানো হচ্ছে না, এটার জন্য সদস্যদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত,” বলেন তিনি।
শফিকুল বলেন, “ওই নিউজের পর আমি দুই ঘণ্টা ফোর্সের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। জানতে চেয়েছি, তোমাদের কি জোর করে চাকরিতে আনা হয়েছিল? বলেন- ‘না স্যার, আনা হয়নি’। উন্নত জীবন আশা করছিলা, কিন্তু পাও নাই! উন্নত জীবন যেখানে পাও আবেদন কর, সম্মানের সঙ্গে চাকরি থেকে তোমাদের বিদায় করে দিব।
“পায়ের জুতা থেকে শুরু করে মাথার টুপি পর্যন্ত সরকার বিনে পয়সায় দিচ্ছে। বিনা পয়সায় খাবার, ব্যারাকে বিনা পয়সায় থাকা, আবার সরকার তোমাকে বাসা ভাড়াও দিচ্ছে। যেখানে যাচ্ছে, সেখানে গাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে, আবার খাবারও পৌঁছে দিচ্ছে।”
ওই সংবাদ প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে না করে এক পুলিশ সদস্যকে উদ্ধৃত করে ‘বেআইনি খাতে টাকা নিচ্ছে’, ‘ব্যাংকের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে’, এমন কথাও নজরে আসে ডিএমপি কমিশনারের।
এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “আমি বলছি, ডিএমপির কোনো সদস্যের কাছ থেকে একটি পয়সাও কর্তন করা হয়নি। অথচ একজন কনস্টেবলের বরাতে নিউজ করা হল!
“এটা যুক্তিসঙ্গত কাজ না। আর এই ধরনের নিউজের ক্ষেত্রে ডিএমপির রেফারেন্স দিতে হলে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেই করা উচিৎ।”
তবে সরকারি কর্মীদের জবাবদিহির মধ্যে রাখতে সাংবাদিকদের ভূমিকার গুরুত্বের কথাও বলেন শফিকুল।
“সাংবাদিকরা যদি না থাকতেন, তাহলে সরকারি চাকরি যে কী মজার হত! আমরা চাই না এই চাকরি মজার হোক। আমরা চাই জবাবদিহিতা। সাংবাদিকতার জায়গাটা জবাবদিহিতার। আমার মতো কমিশনারের দায়িত্বকেও জবাবদিহির আওতায় নিয়ে এসেছে সাংবাদিকরা।”
অনুষ্ঠানে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের(আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বলেন, “মহৎ পেশা সাংবাদিকতায় আপনারা নিয়োজিত। প্রত্যেক সাংবাদিকই মানবাধিকার কর্মী।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ক্রীড়া অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপের সিনিয়র নির্বাহী পরিচালক এফ এম ইকবাল বিন আনোয়ার ডন, ক্র্যাবের সভাপতি মিজান মালিক, সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাইফ বাবলু।