এমন শাস্তি হবে ভবিষ্যতে কেউ সাহস পাবে না: প্রধানমন্ত্রী

কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘ধর্মকে ব্যবহার করে যারা সহিংসতা’ সৃষ্টি করছে তাদেরকে অবশ্যই খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2021, 01:40 PM
Updated : 14 Oct 2021, 03:50 PM

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজামণ্ডপে ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা চলার মধ্যেই বুধবার সকালে কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে তারা তোপের মুখে পড়ে, বাঁধে সংঘর্ষ।

এর জের ধরে চাঁদপুরেও পূজা মণ্ডপে ভাঙচুর ও সংঘর্ষ হয়, সেখানে প্রাণহানিও ঘটে। মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কর্ণফুলী উপজেলা, কক্সবাজারের পেকুয়া, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জেও।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যেখানে যেখানে যারাই এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাবে সাথে সাথে তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে।

“আমরা অতীতেও করেছি এবং ভবিষ্যতে আমরা করতে পারব এবং যথাযথ শাস্তি তাদের দিতে হবে। এমন শাস্তি যেন ভবিষ্যতে আর কেউ সাহস না পায় সেটাই আমরা চাই।”

কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “খুব ব্যাপকভাবে তদন্ত হচ্ছে। অনেক তথ্য আমরা পাচ্ছি এবং অবশ্যই এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করবই। এটা আমরা করতে পারব।

“এখন প্রযুক্তির যুগ এটা বের করা যাবে এবং সে যেই হোক না কেন, যে ধর্মেরই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। আমরা তা করেছি এবং করব।”

কিছু মানুষের মধ্যে ‘দুষ্টু বুদ্ধির ব্যাপার আছে’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জিনিস খুব সুন্দরভাবে চলছে, সেটাকে নষ্ট করা; বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, সে যাত্রাটাকে ব্যাহত করা এবং দেশের ভেতরে সমস্যার সৃষ্টি করা এ ধরনের লোক কাজ।

“যারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে না, বিশ্বাস অর্জন করতে পারে না। রাজনীতি নেই, কোনো আদর্শ নেই, আসলে তারাই এই ধরনের কাজ করে। এটা অনেকটা তাদের এক ধরনের দুর্বলতা। কিন্তু এর বিরুদ্ধে যদি সকলে সচেতন থাকে... অবশ্যই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা কখনোই নিজেদেরকে সংখ্যালঘু ভাববেন না। আমরা আপনাদেরকে সংখ্যালঘু না, আপনজন হিসেবে মানি। আমাদের এই দেশের নাগরিক হিসেবে মানি। সমঅধিকারে আপনারা বসবাস করবেন, আপনারা সমঅধিকার ভোগ করবেন, সমঅধিকার নিয়ে আপনাদের ধর্ম পালন করবেন, উৎসব করবেন- সেটাই আমরা চাই।

“আমি চাই যে আমাদের দেশের মানুষ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে এবং সব ধর্মের মানুষই তার ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে- সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”

সরকার প্রধান বলেন, ইসলাম ধর্মে সব ধর্মের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) সব সময় বিশ্বাস করতেন সব ধর্মের মানুষ, তাদের নিজ ধর্ম পালন করবে।

তিনি বলেন, কিন্তু কিছু লোক ধর্মান্ধতায় ভোগে। তারা সব সময় সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চায়। সব ধর্মেই এই ধর্মান্ধ শ্রেণিটা আছে। তারা সব সময় একটা গোলমাল, একটা কিছু করার চেষ্টা করে।

“সেই ক্ষেত্রে যদি সকলে আমরা এক হয়ে চলি নিশ্চয়ই তারা এই ক্ষতি করতে পারবে না।”

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারির এক বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে তার কন্যা বলেন, “এদেশে হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আপনারা সুখে বাস করবেন, পাশাপাশি বাস করবেন, ভাই ভাই হিসেবে বাস করবেন, কোনোমতে যেন সাম্প্রদায়িকতা বাংলার মাটিতে আর না আসে।”

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সব সময় জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করবে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে।

“অর্থাৎ ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার এবং বাংলাদেশে কিন্তু এটা সব সময় ছিল আছে। প্রত্যেকটা উৎসবে সবাই কিন্তু একসঙ্গে শামিল হয়ে আনন্দ উপভোগ করত। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু দুষ্টু চক্র কিছু ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের ভেতরের এই চেতনাটাকে নষ্ট করতে চায়- এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, বিশেষ করে বিএনপি-জামাতের হাতেই ধর্মের নামে বিভেদ, দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। তাছাড়া সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ারও প্রভাব এসে পড়ছে।

“সেটা আমাদের নিজেদের দেশে শুধু না, প্রতিবেশী দেশকেও এই ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে, সচেতন থাকতে হবে।”

মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানেও যেন এমন কিছু না করা হয়, যার প্রভাব আমাদের দেশে এসে পড়ে, আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আঘাত আসে। এই ব্যাপারে তাদেরকেও একটু সচেতন থাকতে হবে। এটা আমার অনুরোধ থাকল।”

অনুষ্ঠানে দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের নানা উদ্যোগ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। 

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রান্তে এসময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মন্ডল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন ঢাকার অধ্যক্ষ পূর্নাত্নানন্দ মহারাজসহ সনাতন ধর্মালম্বী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।