ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএস থেকে বৃহস্পতিবার সকালে একটি কোম্পানির ১৮ জন কর্মী গাজীপুরের পূবাইলের একটি রিসোর্টে যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। কিন্তু এরপর ফোন না ধরায় এবং বিকালেও তারা সেই রিসোর্টে না পৌঁছায় স্বজন-বন্ধুরা হয়েছিলেন উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন থানায়ও দৌড়েছিলেন কয়েকজনের স্বজন।
Published : 07 Oct 2021, 10:36 PM
পরে রাতে জানা গেল, তাদের আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আটকদের স্বজনরাও মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের অভ্যর্থনা কক্ষে উপস্থিত হন।
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, তারা যে কোম্পানিতে কাজ করেন, সেটি অনুমোদনহীনভাবে অনলাইনে সুদের ব্যবসা চালাচ্ছিল। তাদের কয়েকজনকে আটক করে যাচাই করা হচ্ছে।
পরে মধ্যরাতে সাতজনকে রেখে বাকি ১১ জনকে ডিবি ছেড়ে দেয়।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক প্রতারণার বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে অনলাইনে লোক ঠকানোর নানা ব্যবসার খবর পেয়ে তদন্তের জাল আরও বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
যে ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে, তারা সবাই বারিধারা ডিওএইচএসএর নিউ মিরাকল ফিনটেক বিডি নামে একটি কোম্পানিতে কাজ করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে একটি বাসে (কোস্টারে) করে তারা পূবাইলের অরণ্যবাস রিসোর্টের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু তারা না পৌঁছায় স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন।
যোগাযোগ করা হলে সন্ধ্যায় অরণ্যবাস রিসোর্টের মালিক মাহাবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই কোম্পানির কর্মীরা দিনভর থাকার বুকিং দিয়েছিল। রাতে থাকার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছিল। তাদের খাবার প্রস্তুত ছিল, রুমগুলোও খালি ছিল। কিন্তু তারা রিসোর্টে আসেননি।
নিখোঁজদের একজন দেবাশীষ দে’র ভাই দেব্যোজিৎ দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ভাই দেবাশীষ সকাল ৬টায় বাসা থেকে বের হয়। সকাল ১০টা থেকে তার মা দেবাশীষকে ফোন করলে ফোন বাজছিল, কিন্তু কেউ ধরছিল না। তখন তার বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে আদাবর থানায় যান অভিযোগ দিতে।
আদাবর থানার ডিউটি অফিসার এসআই মাধব চৌধুরী বলেন, ছেলে নিখোঁজের অভিযোগ নিয়ে দেবাশীষের বাবা দুলাল চন্দ্র দে থানায় এসেছিলেন। তাকে ঘটনাস্থলে থানায় যেতে বলা হয়েছে।
নিখোঁজদের একজন জান্নাতুল ফেরদৌস ইতির বাগদত্তা শারিদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল ৭টায় তিনি গিয়ে ইতিকে অফিসের সামনে রেখে এসেছিলেন। এর ঘণ্টাখানেক পরে কথা হয়। তখন ইতি জানিয়েছিলেন তারা উত্তরায়, পূবাইলের পথে গাড়ি চলছে। এরপর সারাদিন আর খোঁজ-খবর নেই।
নিউ মিরাকেল’র মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক নাজমুস সাকিবের স্ত্রী সিনথিয়া গুলশান থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। তবে তাকেও ক্যান্টনমেন্ট থানায় যেতে বলা হয়।
রাত ৮টার দিকে পরিবারগুলো অভিযোগ করার জন্য ক্যান্টনমেন্ট থানায় যান। সেখানেই তারা জানতে পারেন, নিখোঁজরা মিন্টো রোডে ডিবি হেফাজতে রয়েছেন।
ইতির বোন মনি আক্তার রাত পৌনে ৯টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি পুলিশের কাছ থেকে জেনেছেন তার বোন মিন্টো রোডের ডিবি হেফাজতে রয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট থানা থেকে ডিবি অফিসের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
তখন ফোন করলে একই কথা বলেন দেবাশীষের ভাই দেবজিত দেও।
কী কারণে তাদের আটক করা হল, সে বিষয়ে জানতে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তারের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “এরা অনলাইন সুদের ব্যবসা করে। চায়নার মালিক সবাই। তারা বাংলাদেশিদের ব্যবহার করে ২ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে একমাসে ৪ হাজার টাকা নেয়। মাইক্রোক্রেডিট দেখিয়ে অনলাইন প্লাটফর্মে অনুমোদিত এই ব্যবসা বিদেশিরা এসে মহজনী ব্যবসার মতো করছে। এটার কোনো অনুমোদন নেই।”
তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে হাফিজ বলেন, “যাদের আনা হয়েছে, তাদের যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। যারা জড়িত নয়, তাদের ছেড়ে দিয়ে মূল মালিক যারা, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”