ভোরে সূর্যের আলো উদ্ভাসিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেবীর আবাহনে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা; আর চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই ‘মহালয়া’ হিসেবে পরিচিত।
Published : 06 Oct 2021, 07:07 PM
বুধবার মহালয়া এর মধ্য দিয়ে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
বুধবার ভোরে রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির ও পূজামন্ডপগুলোতে এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান।
এবার করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপ কম থাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা মন্দির-পূজামন্ডপে গিয়ে বিশেষ পূজায় অংশ নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশ দিনটি উদযাপন করেছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, এ দিনেই (মহালয়া) দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এ দিন থেকে দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়।
মহালয়া অর্থ হচ্ছে আর ছয় দিনের প্রতীক্ষায় মায়ের পূজা।
হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন ও সন্ধিপূজা- এ তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব।
মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয় দেবীপক্ষের। এর আগের পক্ষ হলো পিতৃপক্ষ। এ পক্ষে ভক্তরা তাদের পূর্বপূরুষের আত্মার প্রীতির জন্য অন্ন-জল নিবেদন করে থাকেন। শাস্ত্রে একে বলা হয় তর্পণ।
সনাতন পঞ্জিকা মতে, শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে ১১ অক্টোবর। ১২ অক্টোবর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর অষ্টমী, ১৪ অক্টোবর নবমী ও ১৫ অক্টোবর দশমী।
বিজয়া দশমীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এবার সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মন্ডপে পূজা হবে। গতবছরের চেয়ে যা এক হাজার ৯০৫টি বেশি। রাজধানীতে পূজামন্ডপের সংখ্যা ২৩৮টি।
বুধবার ভোর ৬টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মেলাঙ্গনে পূজামন্ডপে চন্ডীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে মহালয়ার অনুষ্ঠান শুরু হয়।
মূল আচার অনুষ্ঠান হিসেবে ঘট স্থাপন করে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে পূজা করা হয়। সকাল ৯টায় হয় ত্রিভঙ্গচরণ ব্রক্ষচারীর চন্ডীপাঠের সঙ্গে সমবেত কন্ঠে ইয়াচন্ডী অর্চনা এবং সকাল ১১টা পর্যন্ত চলে বিশেষ পূজা।
বিকালে বিভিন্ন মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা সভা।
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনরা বিক্রম দোরাইস্বামী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দেন । তিনি মোমবাতি প্রজ্বলন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন সহধর্মিনী সংগীতা দোরাইস্বামী।
হাইকমিশনার মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতা এবং অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দির ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দির, রমনা কালী মন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, স্বামীবাগ শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রক্ষচারী আশ্রম ও মন্দির, মীরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরে নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহালয়া উদযাপন হয়।
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির এবং স্বামীবাগ লোকনাথ ব্রক্ষচারী আশ্রম ও মন্দিরে অসহায় দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী, ব্রক্ষার বর অনুযায়ী কোনো মহিষাসুরকে একমাত্র নারী শক্তির দ্বারা সম্ভব ছিল বধ করা। কোনো মানুষ বা দেবতা দ্বারা তাকে বধ করা সম্ভব ছিল না।
ব্রক্ষা, বিষ্ণু ও শিব শক্তি দ্বারা সৃষ্ট নারী শক্তি সিংহবাহিনী মা দুর্গার মহিষাসুরকে পরাজিত করে হত্যা করেন। মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। এভাবে মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গার আগমন ঘটে মর্ত্যলোকে।