আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় হাই কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন রাজধানীর স্কলাসটিকা স্কুলের ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সেলর ইভানা লায়লা চৌধুরীর স্বামী আব্দুল্লাহ হাসান মাহমুদ রুম্মান এবং চিকিৎসক (নেফ্রলজিস্ট) অধ্যাপক মুজিবুল হক মোল্লা।
Published : 29 Sep 2021, 03:22 PM
বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চে অবেদনটি উত্থাপন করেন তাদের আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ন। পরে আদালত আবেদনটি বৃহস্পতিবার উপস্থাপন করতে বলে।
এ আদালতের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইউসুফ হোসেন হুমায়ন স্যার সকালে একজন ডাক্তার এবং একজন অ্যাডভোকেটের একটা আগাম জামিন মেনশন (উত্থাপন) করেছেন, সেটা আগামীকাল আসবে।”
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার পরীবাগে দুটি নয়তলা ভবনের মাঝ থেকে ৩২ বছর বয়সী ইভানার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন পুলিশকে বলেছে, ইভানা ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তাদের ধারণা।
স্কলাস্টিকা স্কুলের এই কর্মকর্তার মৃত্যুর পর তার স্বজনরা জানতে পারেন, আইনজীবী স্বামী রুম্মানের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে সুখী ছিলেন না দুই সন্তানের মা ইভানা।
ইভানা লায়লা চৌধুরীর মৃত্যুর জন্য তার স্বামী আব্দুল্লাহ হাসান মাহমুদ রুম্মানকে দায়ী করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় অভিযোগ করেন তার বাবা এ এস এম আমান উল্লাহ চৌধুরী। পরদিন আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে তিনি মামলা করেন। সেখানে রুম্মান ছাড়াও ইভানার চিকিৎসক অধ্যাপক মুজিবুল হক মোল্লাকে আসামি করা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, অধ্যাপক মুজিবুল হক মোল্লা কোনো প্রকার রোগ নির্ণয় (ডায়াগনাইসিস) ছাড়াই ইভানাকে এমন ওষুধ দেন, যা মানসিক রোগের জন্য প্রযোজ্য।
ওই ওষুধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘আত্মহত্যার প্রবণতা’ ও ‘বিষণ্ণতা’ (ডিপ্রেশন) বাড়ায় বলে এজাহারে দাবি করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, ইভানার মৃত্যুর পর তার বাবা একটি ইমেইল সম্পর্কে জানতে পারেন। সেই ইমেইল থেকে বাবা জেনেছেন, বিয়ের পর থেকেই ইভানার ওপর ‘শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার’ করতেন রুম্মান। এমনকি ইভানা যদি চাকরি না ছাড়েন, তাহলে ‘ডিভোর্স দেওয়া হবে’ বলেও হুমকি দিয়েছিলেন।
মামলায় বলা হয়, “ইভানার ফেইসবুক পোস্ট ও মেসেঞ্জারে বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন থেকে বাবা নিশ্চিত হয়েছেন যে, রুম্মান তার পরকীয়া সম্পর্কের কারণে ইভানার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন।”
এজাহারে বলা হয়েছে, ইভানাকে নিয়মিত নেফ্রলোজিস্ট অধ্যাপক মুজিবুল হক মোল্লার কাছে নিয়ে যেতেন রুম্মান। ওই চিকিৎসক ইভানাকে দেওয়া প্রেসক্রিপশনে তার শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কোনো বর্ণনা না লিখে বা কোনো রোগের নাম উল্লেখ না করে এমন ওষুধ দিয়েছেন যা মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
“ওই ওষুধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘আত্মহত্যার প্রবণতা’ ও ‘ডিপ্রেশন’ বাড়ায়। ওই ওষুধগুলো দেওয়ার আগে রোগনির্ণয় (ডায়াগনাইসিস) করা জরুরি। সেটাও তিনি করেননি।“
রুম্মানের বিষয়ে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, “রুম্মান নিজের পরকীয়া সম্পর্ক নির্বিঘ্ন করার জন্য ইভানাকে ‘সরিয়ে দিতে’ ঘুমের ওষুধের নামে ক্ষতিকর দ্রব্য সেবন করিয়েছেন। ইভানাকে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে বিভিন্ন কটূ কথা বলে তার জীবনকে অতীষ্ট করে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছেন।”
ইভানা ও রুম্মান দুজনই ঢাকার লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজ থেকে এলএলবি করেন। এরপর রুম্মান লন্ডন থেকে বার-এট-ল করে দেশে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। আর রুম্মানকে ভালোবেসে ২০১০ সালে বিয়ে করেন ইভানা, এরপর তিনি আর বার-এট-ল পড়তে যাননি।
ইভানার বাবা প্রকৌশলী আমান উল্লাহ চৌধুরী সড়ক ও জনপথের প্রকৌশলী। বিআরটিএর পরিচালক থাকা অবস্থায় তিনি অবসরে যান। আর ইভানার শ্বশুর মোহাম্মদ ইসমাঈল অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে গেছেন।