ইভানার আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনার’ অভিযোগে স্বামী-চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

রাজধানীর স্কলাসটিকা স্কুলের ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সেলর ইভানা লায়লা চৌধুরীকে (৩২) আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তার স্বামী ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এবার মামলা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2021, 04:45 PM
Updated : 25 Sept 2021, 07:48 PM

শাহবাগ থানায় মামলাটি করেছেন ইভানার বাবা এ এস এম আমান উল্লাহ চৌধুরী, আগের দিন যিনি একই থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইভানার মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার তার বাবা আমানউল্লাহ চৌধুরী শাহবাগ থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেছেন।“

পুলিশ জানায়, এ মামলায় ইভানার স্বামী আব্দুল্লাহ হাসান মাহমুদ রুম্মান ও চিকিৎসক (নেফ্রলজিস্ট) অধ্যাপক মুজিবুল হক মোল্লাকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই চিকিৎসকের (নেফ্রলোজিস্টের) প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইভানাকে এক বছর ধরে ঘুমের ওষুধ সেবন করানো হচ্ছিল। ইভানা পরে তার বন্ধুদের বলেছেন, প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলার জন্য তার স্বামী রুম্মান তাকে (ইভানাকে) ঘুমিয়ে রাখতে ঘুমের ওষুধ সেবন করাচ্ছেন।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর বুধবার শাহবাগের পাশে পরীবাগের দুটি নয়তলা ভবনের মাঝ থেকে ৩২ বছর বয়সী ইভানার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর ইভানার বাবা এ এস এম আমান উল্লাহ চৌধুরী শাহবাগ থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দেন। এতে তিনি ইভানার আইনজীবী স্বামী রুম্মানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

তখন রমনা বিভাগের উপ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, এই অভিযোগ থানা গ্রহণ করলেও তা আগে অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে।

‘আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ায় এমন ওষুধ দেওয়া হয় ইভানাকে’

শনিবার রাতে শাহবাগ থানায় ইভানার বাবার দায়ের করা মামলায় নিহতের স্বামী রুম্মানের পাশাপাশি এক নেফ্রলোজিস্টের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, কোনো প্রকার রোগ নির্ণয় (ডায়াগনাইসিস) ছাড়াই অধ্যাপক মুজিবুল হক মোল্লা নামের ওই চিকিৎসক (নেফ্রলজিস্ট) ইভানাকে এমন ওষুধ দেন, যা মানসিক রোগের জন্য প্রযোজ্য।

ওই ‍ওষুধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘আত্মহত্যার প্রবণতা’ ও ‘বিষণ্ণতা’ (ডিপ্রেশন) বাড়ায় বলে এজাহারে দাবি করা হয়।

এতে বলা হয়েছে, “ইভানার মৃত্যুর পর তার বাবা, মেয়ের একটি (৩ মে লেখা) ইমেইল সম্পর্কে জানতে পারেন। সেই ইমেইল থেকে বাবা জেনেছেন, ইভানার স্বামী রুম্মান বিয়ের পর থেকেই ইভানার ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করত। এমনকি ইভানা যদি চাকরি না ছাড়েন তাহলে তাকে ডিভোর্স দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন রুম্মান।

“ইভানার ফেইসবুক পোস্ট ও মেসেঞ্জারে বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন থেকে বাবা নিশ্চিত হয়েছেন যে, রুম্মান পরকীয়ার কারণে তার মেয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন।“

এজাহারে বলা হয়েছে, “ইভানাকে নিয়মিত নেফ্রলোজিস্ট অধ্যাপক মুজিবুল হক মোল্লার কাছে নিয়ে যেতেন রুম্মান। ওই চিকিৎসক ইভানাকে দেওয়া প্রেসক্রিপশনে তার শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কোনো বর্ণনা না লিখে বা কোনো রোগের নাম উল্লেখ না করে এমন ওষুধ দিয়েছেন যা মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।

“ওই ওষুধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘আত্মহত্যার প্রবণতা’ ও ‘ডিপ্রেশন’ বাড়ায়। ওই ওষুধগুলো দেওয়ার আগে রোগনির্ণয় (ডায়াগনাইসিস) করা জরুরি। সেটাও তিনি করেননি।“

অন্যদিকে স্বামী রুম্মানের বিষয়ে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, “রুম্মান নিজের পরকীয়া সম্পর্ক নির্বিঘ্ন করার জন্য ইভানাকে ‘সরিয়ে দিতে’ ঘুমের ওষুধের নামে ক্ষতিকর দ্রব্য সেবন করিয়েছেন। ইভানাকে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে বিভিন্ন কটূ কথা বলে তার জীবনকে অতীষ্ট করে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছেন।“

ইভানার স্বামী আব্দুল্লাহ হাসান মাহমুদ রুম্মান ব্যরিস্টার। ইভানা ও রুম্মান দুজনই ঢাকার লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজ থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন। এরপর রুম্মান লন্ডন থেকে বার-এট-ল সম্পন্ন করে ব্যারিস্টার হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। আর রুম্মানকে ভালোবেসে ২০১০ সালে বিয়ে করেন ইভানা, এরপর তিনি আর বার-এট-ল পড়তে যাননি। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে ছোটটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিস্টিক) শিশু।

ইভানার বাবা প্রকৌশলী আমান উল্লাহ চৌধুরী সড়ক ও জনপথের প্রকৌশলী। বিআরটিএর পরিচালক থাকা অবস্থায় তিনি অবসরে যান। আর ইভানার শ্বশুর মোহাম্দ ইসমাঈল অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে গেছেন।

ইভানার মৃত্যুর পর তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন পুলিশকে জানিয়েছে, ইভানা ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তাদের ধারণা। স্কলাস্টিকা স্কুলের এই কর্মকর্তার মৃত্যুর পর তার বাবা-মা জানতে পারেন যে আইনজীবী স্বামীর সঙ্গে দুই সন্তান নিয়ে অসুখী এক দাম্পত্যে ছিলেন এই নারী।

আরও পড়ুন: