তালেবানের সরকার নিয়ে এখনই ‘উপসংহারে যাচ্ছে না’ বাংলাদেশ

আফগানিস্তানে স্থায়ী একটি সরকার গঠিত হওয়ার পরই কেবল তাদেরকে স্বাগত জানানো কিংবা না জানানোর প্রশ্ন বাংলাদেশের সামনে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2021, 03:02 PM
Updated : 8 Sept 2021, 03:11 PM

তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, আফগানিস্তান পরিস্থিতি সরকার এখনো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আফগান পটপরিবর্তনের এই সময়ে যারা সহায়তা বা মধ্যস্থতা করছেন, তাদের সঙ্গে ’সার্বক্ষণিক যোগাযোগে’ আছে।

”এই সরকার গঠিত হওয়ার সাথে সাথে যে প্রক্রিয়াগুলো হয়, স্বাগত জানানো বা স্বাগত জানাচ্ছি না- এ ধরনের সিদ্ধান্তে আমরা যাচ্ছি না, এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই। এটা অন্তর্বর্তী সরকার, আমরা স্থায়ী সরকার আসার অপেক্ষা করছি। আমরা তাড়াহুড়োটা করতে চাই না।”

পশ্চিমা দেশগুলোর সেনাপ্রত্যাহারের সুযোগে কট্টর ইসলামী দল তালেবান সবাইকে চমকে দিয়ে ২০ বছর পর আবারও আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ১৫ অগাস্ট রাজধানী কাবুল দখলের তিন সপ্তাহ পর সোমবার তাদের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা এসেছে।  

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় রাজি, কিন্তু এখনই তাদের সরকারকে তারা স্বীকৃতি দিচ্ছে না।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে, সেই প্রশ্ন ঘুরছে বেশ কিছুদিন ধরেই। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকেও বুধবার নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।

তিনি বলেন, “আমরা খেয়াল করেছি, মাত্র গতকালই আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, আমরা যেটা বলেছি- উই আর অবজার্ভিং দ্য সিচুয়েশন ক্লোজলি। কারণ এই অন্তর্বর্তী সরকার যেটা বলেছেন, তারা সেটা কতটা করে দেখাতে পারছেন।

”কারণ নীতিগতভাবে আদর্শিক এমন কিছু জায়গা আছে, আমরা ছাড় দেব না। সুতরাং উই আর স্টিল অবজার্ভিং। উই আর স্টিল ওয়েটিং ফর এ পার্মানেন্ট গভার্নমেন্ট।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এটা একটা অন্তর্বর্তী সরকার, বলা হয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার হবে, সেটা হওয়ার জন্যও প্রক্রিয়া বাকি আছে, এখানে নারীদের অংশগ্রহণ কতটা হচ্ছে বা অন্যান্য বিষয়। আওয়ার ফোকাস স্টিল রিমেইনস পিস অ্যান্ড স্ট্যাবিলিটি।”

১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবান শাসনামলে মেয়েদের শিক্ষা বা চাকরির ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। পুরুষের লিখিত অনুমতি নিয়ে সর্বাঙ্গ ঢাকা বোরখা পরে, তবেই নারীরা ঘরের বাইরে যেতে পারত।

শরিয়া আইনের নামে দোররা বা চাবুক মারা, হাত-পা কেটে নেওয়া এবং প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো বা পাথর ছুড়ে হত্যার মত শাস্তি ছিল সেসব দিনের নিয়মিত ঘটনা। 

দুই দশক পর ক্ষমতায় ফিরে এবার নিজেদের নমনীয় ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে তালেবান। তারা বলছে, শরিয়া আইন অনুযায়ী নারীরা তাদের অধিকার পাবে। সব চলবে শরিয়া আইনেই। তবে তা কেমন হবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।  

বাংলাদেশে বিভিন্ন সংগঠন ইতোমধ্যে তালেবানের সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সরকারের কাছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, “তালেবান তাদের যেসব কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিতি ছিল, তারা বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধও ছিল, তারপরেও দেশগুলো কেন আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসছে তাদের প্রতি…

”কারণ যে বার্তাটি তারা দিয়েছেন, তারা একটি পরিবর্তিত তালেবান। এটার লিডারশিপ হয়ত চাচ্ছেন, অনেকে হয়ত চাচ্ছেন, কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে তারা এটা কতোটা বজায় রাখতে পারছেন, এটা আমাদেরকে আরও দেখতে হবে সামনের দিনে। এ কারণে আমরা কোনো উপসংহার টানছি না।

অন্য কোনো দেশের অবস্থান দেখে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এটা এককভাবে বাংলাদেশের বিষয়। অন্য রাষ্ট্রগুলো কী করছে, আমরা সেখান থেকে কিছু ক্লু ড্র করার চেষ্টা করছি, এটাতো স্বাভাবিকভাবেই করা হয়।”

তবে তালেবানের সঙ্গে জাতিসংঘের কোনো সংলাপ হলে সেখানে সম্পৃক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “তালেবানের সঙ্গে জাতিসংঘ যদি কোনো সংলাপে মিলিত হয়, অথবা আফগানিস্তানের শান্তি, এমনকি আমরা শুনছি যে অর্থনৈতিক সংকটে আছে, খাদ্য সংকটে আছে— এটা নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, এ সংলাপে পার্টি হতে চাই কি-না, সেটাতে আমরা সম্মতি দিব, এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সুতরাং আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।”

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তানে বাংলাদেশি যারা ছিলেন, তাদের ‘বড় অংশকে’ ইতোমধ্যে সরিয়ে আনা গেছে। তবে এখনো ১০ জন সেখানে আছেন।

“এর মধ্যে তিনজন এনজিওকর্মী। বাকি সাতজন কিন্তু স্বেচ্ছায় রয়ে যাচ্ছেন সেখানে, এটা কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ পয়েন্ট আমাদের জন্য যে, দে আর ফাইন্ডিং সাম শর্ট অব কমফোর্ট দেয়ার।”