তালেবান সরকারের সামনে ‘অব্যাহত বিক্ষোভ’ মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ

আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবানের নব ঘোষিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অব্যাহত বিক্ষোভের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগোতে হবে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2021, 08:07 AM
Updated : 8 Sept 2021, 08:07 AM

মঙ্গলবার কাবুলে সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা শূন্যে গুলি ছুড়ে একদল বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেন। 

এ সময় একদল আফগান নারী রাস্তার পাশে হাঁটু মুড়ে সামনের দিকে ঝুঁকে নিজেদের রক্ষায় সচেষ্ট হন এবং পরে নিরাপদ স্থানে সরে যান। এর মধ্যেই এক নারী তাদের দিকে তাক করা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে অনর্গল বলে যান তালেবান শাসনামল নিয়ে তার আপত্তি আর ভবিষ্যৎ দুশ্চিন্তার কথা।

“এরা (তালেবান) খুব্ খারাপ, তারা মানুষই নয়। আমাদেরকে বিক্ষোভের অধিকারটুকুও দিচ্ছে না। তারা মুসলিম তো নয়ই, তারা কাফের,” বলেন তিনি।

ভারি গুলিবর্ষণ ফের শুরু হলে বিক্ষোভকারীরা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন; যদিও এই বিক্ষোভে তালেবানের গুলিতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে তালেবান যোদ্ধারা ট্রিগার চেপে ধরার আগে তাদের হাতে থাকা বন্দুকগুলো যে শূন্যে তাক করা ছিল, তাও দেখা গেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তালেবানরা কাবুল দখলের পর মাস পার হতে চললেও এ ধরনের বিক্ষোভ, প্রতিদিন দেশজুড়ে নারীদের নেতৃত্বে ছোট ছোট নানান প্রতিবাদ কর্মসূচি মঙ্গলবার ঘোষিত নতুন তালেবান সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়েই হাজির হচ্ছে।

কট্টরপন্থি ইসলামী গোষ্ঠীটি অবশ্য আফগানদের খানিকটা ধৈর্য ধরতে বলেছিল; জনগণের দাবিদাওয়ার দিকে নজর দিতে নতুন সরকার গঠন পর্যন্ত সময়ও চেয়েছিল তারা।

“তাদেরকে কিছু সময় ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে। যখন সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সংগঠনগুলো কাজ করা শুরু করবে তখন তারা আপনাদের কাছে যাবে,” নারীদের বিক্ষোভের প্রসঙ্গে দিনকয়েক আগেই এমনটা বলেছিলেন তালেবানের একজন মুখপাত্র।

এখন নতুন মন্ত্রীদের নাম ঘোষিত হয়ে গেছে, গত দুই দশক ধরে একটু একটু করে অবস্থান করে নেওয়া নাগরিক অধিকারভিত্তিক সমাজের প্রত্যাশাও তাই বাড়ছে।

শেষবার তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত, তখন মেয়েরা স্কুলে যেতে পারত না। নারীদের জন্য কাজ ও শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। নিয়ম ভঙ্গকারী যে কাউকে ধর্মীয় পুলিশ বেত মারতে পারত, জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত।

এবার তালেবান আগের তুলনায় অনেক উদার হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; এই প্রতিশ্রুতির দিকে অনেক আফগান ও বিদেশি দাতাদের কড়া নজরও থাকবে।

আফগানিস্তানজুড়ে গত কিছুদিনের বিক্ষোভগুলোতে অংশ নেওয়া নারীরা মূলত তাদের অধিকারের দাবিতেই সরব রয়েছেন।

পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতের নারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা নতুন সরকারে অধিকতর প্রতিনিধিত্ব এবং তাদের অধিকারের প্রতি যেন সম্মান দেখানো হয় তার জন্য জোর চেষ্টা চালাবেন।

“সমাজে মর্যাদা ও চাকরি রক্ষার জন্য নারীদের বেরিয়ে আসতে হবে। এটা এখন ‘হয় এখনই নয়তো কখনোই নয়’ পরিস্থিতি,” বলেছেন হেরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিজনেস স্কুলের শিক্ষার্থী দারিয়া ইমানি।

মঙ্গলবার কাবুলের বিক্ষোভে ইমানিরর জ্ঞাতি বোনেরা অংশ নিয়েছেন।

“আমরা সাহসী নই, আমরা কেবল আমাদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় মরিয়া,” বলেছেন তিনি।

তালেবান নেতারা এবার ইসলামী আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নারী অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর আশ্বাস দিলেও সরকারের ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে কোনো নারীকে রাখা হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এখন পর্যন্ত তারা সরকারের বিভিন্ন পদে যেসব কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন, তার মধ্যে কোনো নারীর নাম পাওয়াও যায়নি।