পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামিকে খালাস দিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছে চেম্বার আদালত।
Published : 19 Jul 2021, 08:28 PM
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ভার্চুয়াল চেম্বার আদালত সোমবার এ স্থগিতাদেশ দেয়।
এ মামলার দুই আসামি মেহেদি হাসান স্বপন ও সুমন জমাদ্দারের আপিল গ্রহণ এবং ডেথ রেফারেন্স খারিজ করে গত ৩০ জুন বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ তাদের খালাসের রায় দিয়েছিল।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর চেম্বার আদালতে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ। আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ঘটনায় আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে। তাছাড়া এটি নৃসংশ একটি হত্যাকাণ্ড। তাই হাই কোর্টের রায়টি স্থগিত করতে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছিল। মাননীয় চেম্বার আদালত হাই কোর্টের রায়টি স্থগিত করে আগামী ১ অগাস্ট আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রেখেছেন।”
হাই কোর্টে আসামিদের পক্ষে আপিল শুনানি করেছিলেন আইনজীবী শিশির মো. মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
আইনজীবী মো. শিশির মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সেদিন বলেছিলেন, ঘটনার সময় আসামি সুমন জমাদ্দারের বয়স ছিল ১৬ বছর। তার প্রমাণ হিসেবে আসামির জন্মসনদ, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার কাগজপত্র, তার মা-বাবার বিয়ের কাবিননামা তারা উচ্চ আদালতে উপস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু পিরোজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সেসব বিবেচনায় না নিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।
“তাছাড়া সুমন জমাদ্দারের স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করেই দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। আর সুমন জমাদ্দার যেহেতু শিশু ছিলেন, তাই শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সাক্ষ্যগত কোনো মূল্য নেই। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই উচ্চ আদালত দুই আসামিকে খালাস দিয়েছেন।”
তবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান সেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আসমি সুমন জমাদ্দারের জন্মসনদ সংগ্রহ করেছিলেন। তা হাই কোর্টে উপস্থাপন করলেও আদালত তা গ্রহণ না করে আসামিদের খালাসের রায় দিয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি শিশু তার নানার একটি গরুকে স্কুল মাঠে নিয়ে যায় ঘাস খাওয়ানোর জন্য। পরে সে ঘরে ফিরে না আসায় নানা বাড়ির লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি শুরু করে।
পরদিন দুপুরে প্রতিবেশী শাহজাহান জমাদ্দার বাগানে বিবস্ত্র অবস্থায় মেয়েটির ওড়না পেঁচানো মৃতদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ননী গোপাল রায় তার প্রতিবেদনে বলেন, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ওই বছর ৩১ জানুয়ারি আসমিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। আসামি সুমন জমাদ্দার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ১৩ জন ও আসামিপক্ষে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
পরে নিয়ম অনুযায়ী আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন হাই কোর্টে পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। পাশাপাশি আসামিরা খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করে।
আসামিদের সেই আপিল এবং ডেথ রেফারেন্স শুনানির পর দুই আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেয় হাই কোর্ট। চেম্বার আদালত সোমবার তার স্থগিত করে দিল।