২১ অগাস্ট মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত পলাতক আসামি ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব বলেছে, ২০০৪ সালে শেখ হাসিনার সভা মঞ্চে এই ব্যক্তিও গ্রেনেড ছুড়েছিলেন।
Published : 23 Feb 2021, 12:26 PM
ঘটনার ১৬ বছর এবং আদালতের রায়ের তিন বছর পর মঙ্গলবার ইকবালকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে।
র্যাবের বক্তব্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহের ইকবাল এক সময় ছাত্রদলে যুক্ত থাকলেও পরে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদে (হুজি) জড়িয়ে পড়েন।
২০০৮ সালে তিনি বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ২০২০ সালের শেষ দিকে তিনি দেশে ফেরেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর মহাপরিচালক চৌধুরী আবব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভোর ৩টার দিকে ইকবাল হোসেন ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিমকে দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) দেওয়া তথ্যে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ আভিযানিক দল ইকবালকে গ্রেপ্তার করে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়।
নানা প্রতিকূতা পেরিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এই মামলার অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। তাতে জঙ্গিদের পাশাপাশি বিএনপির কয়েকজন নেতাকেও আসামি করা হয়।
র্যাব প্রধান আল মামুন বলেন, ২০০৮ সালে ইকবালকে গ্রেপ্তারের জন্য ঝিনাইদহে তার বাড়িতে এবং পরবর্তীতে গাজীপুর ও সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু ইকবাল আত্মগোপন করেন।
তিনি বলেন, “ইকবাল ২০০৮ সালে দেশ ত্যাগ করে। প্রবাসে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় প্রথমে সেলিম এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে। এক পর্যায়ে ইকবাল প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হলে তাকে ২০২০ সালের শেষের দিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
গ্রেনেড হামলার মামলার রায় হয়েছিল ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায়। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয়।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ যে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ইকবালও রয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয় আরও ১১ আসামির।
দণ্ডিত ৩৩ আসামি কারাগারে থাকলেও পলাতক ছিলেন ১৬ জন। ইকবাল গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন পলাতক রইলেন ১৫ জন।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, দেশে ফেরত এসে জঙ্গি ইকবাল তার সমমানদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করতে চেষ্টা করছিলেন।
তিনি বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল জানায়, সে স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল। ১৯৯৪ সালে কেসি কলেজ, ঝিনাইদহে ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধি ছিল।”
ইকবাল ১৯৯৫ হতে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ছিলেন জানিয়ে আল মামুন বলেন, “দেশে ফিরে এসে জঙ্গি ইকবাল আইএসডি ফোন ও অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। এসময় সে, সর্বহারা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে বিরাধে জড়িয়ে পড়ে।
“২০০১ সালে তার চিন্তা-চেতনা ও মনস্তাত্বিক পরিবর্তন আসে এবং ঝিনাইদহের স্থানীয় এক জঙ্গির মাধ্যমে সে হরকাতুল জিহাদে যোগদান করে। ২০০৩ সালে মুফতি হান্নান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সান্নিধ্যে চলে আসে এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে থাকে।”
২০০৪ সালে হামলার আগেই ইকবাল ঢাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন জানিয়ে র্যাব প্রধান বলেন, “অগাস্ট মাসে মুফতি হান্নানের নির্দেশে সে ঢাকায় চলে আসে এবং গোপন আস্তানায় অবস্থান করতে থাকে। সেখানে মুফতি হান্নানসহ অন্যান্যদের সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয় (তার)।
“ইকবাল বলেছে, মুফতি হান্নানের নির্দেশে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল সে। মুফতি হান্নান তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল। ইকবাল মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়েছিল।”
নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষনেতার অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় ২১ অগাস্ট মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পান।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যে ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ আওয়ামী লীগের সেই সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল।