পার্কের নাম থেকে রাগ বাদ পড়লেও ‘রাগ কমবে’

ঢাকার ওসমানী উদ্যানে ‘গোস্বা নিবারণী পার্ক’ তৈরির কাজটি চললেও সেই নামটি থাকছে না; অবশ্য পার্কটির সৌন্দর্যই নগরবাসীর রাগ প্রশমনের কাজটি করে দেবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

কাজী মোবারক হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2020, 04:24 PM
Updated : 7 Dec 2020, 04:25 PM

গুলিস্তানের এই উদ্যানে ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি পার্কটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

তখন নামকরণের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছিলেন, “কর্মস্থলে ও পরিবারে প্রতিনিয়ত মানুষ গোস্যা করে, রাগ হয়। এই পার্কটি এমনভাবে তৈরি করা হবে, যাতে এখানে কেউ মন খারাপ নিয়ে আসলে পরিবেশের সান্নিধ্যে তার মন ভালো হয়ে যাবে, উৎফুল্লতা বাড়বে, নতুন উদ্যমে আবার সে কাজে ফিরে যেতে পারবে।”

৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ২৯ একরের ওসমানী উদ্যানকে ‘গোস্বা নিবারণ পার্কে’ রূপ দেওয়ার কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল দেড় বছরের মধ্যে। তার মধ্যে কাজ শেষ হয়নি, এর মধ্যে মেয়রও গেছে বদলে।

কাজের জন্য পার্কটি বন্ধ থাকায় যারা আগে সেখানে হাঁটতে যেতেন, তারা তা পারছেন না।

এমনই একজন চানখারপুল এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে পার্কটি বন্ধ। শুনেছি এটি হবে গোস্বা নিবারণী পার্ক। তাই খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি, কবে পার্কটি চালু হবে।”

প্রায় তিন বছর পর সরেজমিনে দেখা গেল, পার্কটি নির্মাণকাজের জন্য পুরো ওসমানী উদ্যানের চারদিক টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ভেতরে চলছে কাজ।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কাছে জানা গেল, পার্কের কাজ এগিয়ে চললেও ‘ইতিহাস-ঐতিহ্য’ ধরে রাখার কারণে ‘গোস্বা নিবারণী পার্ক’ নামটি থাকছে না।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মুন্সি আবুল হাসেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে ‘গোস্বা নিবারণী পার্ক’ বা রাগ কমানোর পার্ক বলতে কিছু নেই।

“তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হলে পার্কটি পুরোপুরি বদলে যাবে। এখানকার যেসব আয়োজন, সেগুলো স্বাভাবিকভাবেই মানুষের গোস্বা বা রাগ কমিয়ে দেবে বলে আশা করছি।”

আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে পার্কের কিছু অংশের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

“প্রকল্পটি কয়েকটি প্যাকেজে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধম তিনটি প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে আরও আগেই। আগামী মার্চের মধ্যে এই তিন প্যাকেজের কাজ শেষ হবে আশা করছি।”

প্রকল্পের বর্ণনা দিয়ে হাসেম জানান, প্যাকেজ-১ এ রয়েছে, একটি লাইব্রেরি, ফুড কোর্ট-১, ফুড কোর্ট-২, কার পার্কিং, জিম, টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ড বোর্ড, এটিএম বুথ, ওষুধের দোকান, বিনোদন কেন্দ্র, নগর জাদুঘর।

প্যাকেজ-২ এ আছে শিশুদের খেলার জায়গা, ভলিবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, পান্টার, লেকের পাড় উন্নয়ন, ঘাট তৈরি, মাঠ উন্নয়ন, সাব স্টেশন স্থাপন।

প্যাকেজ-৩ এর আছে ওয়াটার পিউরিফিকেশন সিস্টেম, স্বাধীনতা চত্বর ও কফি শপ, স্পিংকেল সিস্টেম, ওয়াটার রিজার্ভার স্থাপন, প্যাডল বোট, বিভিন্ন ভাস্কর্য স্থাপন, পুরান ঢাকার থ্রিডি স্থাপত্য নকশার মডেল স্থাপন।

প্যাকেজ-৩ এর আতায় জলাধার, আলাদা আলাদা বসার জোন থাকার পাশাপাশি বড় স্কিনে নিজের অবস্থান দেখার ব্যবস্থাও থাকবে বলে জানান প্রকৌশলী হাসেম।

পার্কটির কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাজটা খুবই ধীর গতিতে চলছিল। এখন যেন দ্রুততার সঙ্গে হয়, এ জন্য আমি দু’বার পরিদর্শন করেছি।”

সেখানে ‘নান্দনিক পরিবেশ’ সৃষ্টির কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আধুনিক জাদুঘর তৈরি করা হবে। সেখানে ঐতিহাসিক ঢাকার বিষয় থাকবে। থাকবে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের ইতিহাসও বড় হরফে তুলে ধরা হবে।”

গাড়ি রাখতে ভূগর্ভস্থ পার্কিংও করা হবে বলে জানান মেয়র তাপস।

তিনি বলেন, “এলাকাটা নগর ভবন, সচিবালয়, স্টেডিয়াম সংলগ্ন, সব মিলিয়ে একটা কেন্দ্রীয় স্থান এবং রাস্তাগুলোতে যত্রতত্র গাড়ি রাখার কারণে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। সেই প্রেক্ষিতে আমরা ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়েংর ব্যবস্থা থাকছে। এই কাজটা হয়ত আগামী বছরের মধ্যে শেষ হবে।”