তিন দশক আগের সগিরা মোর্শেদ হত্যার ঘটনার মামলায় অভিযোগ গঠন চতুর্থ বারের মতো পেছালো।
Published : 09 Nov 2020, 03:00 PM
তিন আসামির পক্ষের আইনজীবীর অসুস্থতা ও বিচার শিশু আদালতে নিতে এক আসামির হাই কোর্টে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে সময় চাওয়ায় সোমবার বিচার শুরুর আদেশ দিতে পারেনি আদালত।
অভিযোগ গঠনের জন্য ২৬ নভেম্বর দিন রেখে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ বলেন, আমি শেষবারের মতো সময় দিলাম ।
এর আগে তিনবার এই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়নি।
সোমবার মামলার অন্যতম আসামি মারুফ রেজা (৫৯) ঘটনার সময় শিশু ছিলেন দাবি তার বিচার শিশু আদালতে করার জন্য হাই কোর্টে আবেদন করেছেন বলে তার আইনজীবী সনদপত্র জমা দেন।
আর আসামি ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪) ও তার ভাই আনাস মাহমুদের (৫৯) পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল কোভিড ১৯ আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাদের পক্ষে অব্যাহতির আবেদনের ওপর শুনানির জন্য সময় চাওয়া হয়।
তিন দশক ধরে বিচারের আশায় থাকা সগিরার স্বামী আব্দুস সালাম হতাশা প্রকাশ করে আদালত পাড়ার সাংবাদিকদের বলেন, “এতকাল ধরে একের পর এক তদন্ত পেছালো। আজ আবার উচ্চ আদালতের কথা বলে সময়ক্ষেপন করে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করা হচ্ছে। আর আমরা নিয়মিত বিচার থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি।”
এর আগে ৭ অক্টোবর আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের অসুস্থতার কারণে ৯ নভেম্বর আবারো শুনানি ও সেদিনই অভিযোগ গঠনের দিন রেখেছিলেন বিচারক।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মটরবাইকে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি দৌড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সগিরা মারা যান।
৩১ বছর পরে গ্রেপ্তার সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও মারুফ রেজা (৫৯) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টেগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, স্ত্রীর কথায় প্ররোচিত হয়ে ছোট ভাইয়ের বউকে শায়েস্তা করার জন্য ২৫ হাজার টাকায় সে সময় বেইলি রোড এলাকার ‘সন্ত্রাসী’ মারুফ রেজাকে ভাড়া করেছিলেন ডা. হাসান। মারুফকে সহযোগিতার জন্য স্ত্রীর ভাই রেজওয়ানকে দায়িত্ব দেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকালে স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে রিকশায় করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে যাওয়া সগিরা মোর্শেদের পথ আটকান মটরসাইকেল আরোহী মারুফ ও রেজওয়ান। হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার পর তার হাতের বালা নিতে উদ্যত হলে রেজওয়ানকে চিনে ফেলার কথা বলেন সগিরা, তারপরই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন মারুফ রেজা।
এখন আবাসন ব্যবসায়ী ও বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে। ওই সময়ই তিনি গ্রেপ্তার হলেও তার নাম বাদ দিয়ে মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ।
এরপর বিচার শুরু হলেও সাক্ষ্যে মারুফ রেজার প্রসঙ্গ উঠে আসায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। পরে উচ্চ আদালতে গিয়ে এই মামলা আটকে দেন মারুফ। পরে তদন্তকালে আসামি মিন্টু ও মারুফ গ্রেপ্তার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় ঢাকার বিচারিক আদালত।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাই কোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।
পরের বছর ২৭ অগাস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আরেকটি আদেশ দেয় হাই কোর্ট।
২৮ বছর আগের মারুফের ওই আবেদন গত বছর জুন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে প্রথমে মামলার বাদী সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পিবিআই। অনেক চেষ্টার পর বের করা হয় সগিরাকে বহনকারী সেদিনের যুবক রিকশাচালককে।
তার মাধ্যমে হত্যাকারীদের একজন ডা. হাসানের শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ানকে শনাক্তের পর গত ১০ নভেম্বর রামপুরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাকি তিনজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
এর পর চলতি বছর জানুয়ারিতে ওই চারজনের বাইরে আগের অভিযোগপত্রের আসামি মন্টু মণ্ডল ওরফে মিন্টু নামে আরেকজনকেও আসামির তালিকায় রেখে আদালতে সম্পূরক এই অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই।