মুজিববর্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করবেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 09 Nov 2020, 10:27 AM
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় সোমবার তিনি এ প্রস্তাব আনবেন। নোটিস আকারে তার প্রস্তাব উত্থাপনের পর এ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে বলে অধিবেশনের কার্যসূচি থেকে জানা গেছে।
জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এই বিশেষ অধিবেশন রোববার সন্ধ্যায় শুরু হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ইতিহাসে এটাই প্রথম বিশেষ অধিবেশন। আর সংসদ কক্ষে জাতির জনকের ছবিসহ এটাই সংসদের প্রথম বৈঠক।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের প্রথম দিন সংসদকে জানান, এ অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা টানা চার দিন আলোচনা করবেন এবং বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হবে।
সাধারণ আলোচনার জন্য সংসদ নেতার প্রস্তাব তোলার নজির নিকট অতীতে নেই। সাধারণত জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ বা সংসদের জ্যেষ্ঠ কোনো সদস্য সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করে থাকেন।
সোমবার বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি সংসদ কক্ষে প্রবেশ করবেন। এরপর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত প্রচার হবে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভাষণ সংসদ কক্ষে দেখানো হবে। এরপর বিশেষ অধিবেশনে স্মারক বক্তৃতা দেবেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর আবারও জাতীয় সংগীত প্রচার হবে এবং তিনি সংসদ কক্ষ ত্যাগ করবেন। এরপর কিছুক্ষণের জন্য বিরতি দেওয়া হবে সংসদের বৈঠক।
বিরতি শেষে সংসদের বৈঠক শুরু হলে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবন নিয়ে ১৪৭ বিধিতে আলোচনার জন্য সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করবেন।
সংসদের বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে সকল সংসদ সদস্যের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় নেগেটিভ আসা সকল সদস্য এদিন বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন। পরবর্তী দিনগুলোতে অধিবেশনের কোরাম পূর্ণ হওয়ার স্বার্থে প্রতিদিন ৮০/৯০ জনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সোমবার ১৪৭ বিধির সাধারণ প্রস্তাবে যে বিষয়টি তুলে ধরবেন তা হল- “সংসদের অভিমত এই যে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপতি, বাঙালির অবিসংবাদিত মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালী জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন্তু অন্যায়ের সাথে কখনো আপস করেননি।
“১৯৫৭-৪৮ থেকে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা ১৯৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন- দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম ও আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১ এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'।
প্রধানমন্ত্রী তার প্রস্তাবে বলবেন, “বঙ্গবন্ধু বিশ্বসভায় বাঙালিকে আত্মপরিচয় নিয়ে গর্বিত জাতিরূপে মাথা উঁচু করে চলার ক্ষেত্র রচনা করেছেন। স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন তিনি। সেই সময়কালে বাংলাদেশের উন্নয়নের সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন তিনি।
“২০২০ সালে জন্মশতবার্ষিকীতে মুজিব বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক এবং কর্মজীবন ও দর্শনের উপর জাতীয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হোক।”