বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেছেন।
Published : 06 Oct 2020, 05:34 PM
মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম মঙ্গলবার বিকেলে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই আপিল আবেদন জমা দেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মোট ২০টি গ্রাউন্ডে ৪৫১ পৃষ্ঠার আপিল দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল আবেদনটি ১৮ পৃষ্ঠার। সংশ্লিষ্ট শাখায় আমিই আপিলটি ফাইল করেছি। আপিলে খালাস চাওয়া হয়েছে।”
মিন্নির প্রধান আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, “যত শীঘ্র সম্ভব এ মামলার শুনানি হবে, আমরা শুনানি করার চেষ্টা করব। আমরা আশাবাদী, আইনের আলোকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং মিন্নি বেকসুর খালাস পাবে।”
গত বছর ২৬ জুন ভরদুপুরে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাতকে। ওই ঘটনার একটি রোমহর্ষক ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।
ওই ভিডিও দেখার পর সবার সহানুভূতির কেন্দ্রে ছিলেন রিফাত শরীফের স্ত্রী বরগুনা কলেজের ছাত্রী মিন্নি। কিন্তু ক’দিন বাদেই বেরিয়ে আসে, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে মাদক-আধিপত্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রেমের সম্পর্কও।
প্রধান হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত হন সাব্বির আহমেদ নয়ন ছোট্ট জেলা শহরটিতে নিজেকে ‘নয়ন বন্ড’ নামে পরিচিত করিয়ে কিশোর-তরুণদের নিয়ে দল পাকিয়ে নানা অপকর্ম চালাচ্ছিলেন।
নয়নের মা দাবি করেন, তার ছেলে ও মিন্নি গোপনে বিয়ে করেছিলেন, পরে নয়নকে ছেড়ে তারই বন্ধু রিফাতকে বিয়ে করেন। সোশাল মিডিয়ায়ও নয়নের সঙ্গে মিন্নির জন্মদিন উদযাপনসহ নানা ছবি আসতে থাকলে ঘটনার নাটকীয় মোড় নেয়।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফের করা মামলায় প্রথমে মিন্নিকে ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়েছিল। কিন্তু দুদিন পরই চিত্র পাল্টে যায়, যখন দুলাল শরীফ পুত্রবধূর দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন।
পরে পুলিশের তদন্তেও রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততা বেরিয়ে আসে। তদন্তকারীরা বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন একটি পরিকল্পনা সভা হয়েছিল, সেখানে মিন্নিও উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গে নয়নের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছিল, মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডই তার প্রমাণ।
মিন্নি ও তার বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে এলেও পুলিশ মিন্নিকে সাক্ষীর তালিকা থেকে সরিয়ে আসামির তালিকায় যোগ করে অভিযোগপত্র দেয়। আর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় নয়ন বন্ড বাদ পড়েন আসামির তালিকা থেকে।
প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসমির বিচার শেষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং চারজনকে খালাস দেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। ওই রায়ে মিন্নিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় হত্যাকাণ্ডের ‘পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাকি পাঁচ আসামি হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আঁকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয় (২২) ও মো. হাসান (১৯)।
নিয়ম অনুযায়ী এই ছয় আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদেনের আবেদন)সহ মামলার নথি হাই কোর্টে পাঠানো হয় গত রোববার।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ে হাই কোর্টের অনুমোদন লাগে। হাই কোর্টের অনুমোদনের জন্য মামলার নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাই কোর্টে পাঠাতে হয়।