ধর্ষিত ঢাবি শিক্ষার্থীর বাবার সাক্ষ্যে বিচার শুরু

একমাত্র আসামি মজনুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের আলোচিত মামলার বিচার শুরু হয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2020, 01:36 PM
Updated : 20 Sept 2020, 01:43 PM

রোববার ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক বেগম মোসাম্মৎ কামরুন্নাহারের আদালতে সাক্ষ্য দেন ধর্ষিত শিক্ষার্থীর বাবা।

জজ আদালত ভবনে অবস্থিত এই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য নেওয়ার সময় অন্য কাউকে এজলাসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রুদ্ধদ্বার কক্ষে এ সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় আসামি মজনুকে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাদী জবানবন্দিতে তার মেয়ে কীভাবে মজনুকে শনাক্ত করছেন, তা বিচারকের সামনে তুলে ধরেন।

“তিনি সাক্ষ্যে বলেন, তার কন্যা, মামলার ভিকটিমকে তদন্ত কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোনের অনেকগুলো ছবি দেখায়। সে তার মধ্যে একটি ছবি দেখিয়ে বলে যে এই লোকটিই সেই লোক।”

বাদী তার দায়ের করা এজহার এবং এজাহারে তার স্বাক্ষর শনাক্ত করেন।

এরপর তাকে জেরা করেন মজনুর আইনজীবী রবিউল ইসলাম। মজনুর কোনো আইনজীবী না থাকায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট রবিউলকে তার পক্ষে কৌঁসুলি নিয়োগ করে।

জেরা শেষে বিচারক পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সোমবার দিন ঠিক করে দেন।

আদালতে উদ্ধত মজনু, পরে কান্না

আদালত কক্ষে উদ্ধত আচরণের পর মজনু পরে কান্নায় ‍বুক ভাসিয়েছেন।

মজনুর আইনজীবী রবিউল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রুদ্ধদ্বার কক্ষে মজনুর আচরণ ছিল অস্বাভাবিক, উদ্ধত। মজনু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং বিচারককে তুমি তুমি করে কথা বলতে থাকেন। তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তার ক্ষুধার কথা বলেন। তিনি ভাত খেতে চান। তিনি বিচারককে বলতে থাকেন- আমারে মায়ের কাছে ফিরাইয়া দে, আমি মার কাছে যামু।”

কাঠগড়ায় তার সঙ্গে দাঁড়ানো অন্য একজন হাজতি আসামি শান্ত হতে বললে তাকে মজনু দুই বার ঘুষি মারেন বলেও জানান আইনজীবী রবিউল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মজনু যে কেমন আজ বুঝলাম। ওর ভয়াল রুদ্রমূর্তি দেখলাম আজ। ও আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। গালিগালাজ করতে থাকে সে। তার অভিযোগ, তাকে বিনা কারণে আটকে রাখা হয়েছে।”

শুনানি শেষে এজলাস থেকে পুলিশ সদস্যরা আসামি মজনুকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় কাঁদতে কাঁদতে তিনি আদালত প্রাঙ্গণে লুটিয়ে পড়েন।

তিনি বলতে থাকেন, “আমি মায়ের কাছে যাব। আমি কারাগারে যাব না।”

পুলিশ সদস্যরা তখন টেনে টেনে হাজতখানায় নিয়ে যান এই আসামিকে।

মজনুর এই কান্নাকে দণ্ড কমাতে ‘অভিনয়’ বলে মনে করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু।

রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তবে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তার এ অভিনয়ে কাজ হবে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় একমাত্র আসা‌মি মজনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয় গত ২৬ অগাস্ট।

নোয়াখালীর হাতিয়ায় মজনু (৩০) জীবিকার তাগিদে বছর দশেক আগে ঢাকায় আসেন। তিনি ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

এই বছরের শুরুতে ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা বাস স্টপেজে নামার পর ওই ছাত্রীকে মুখ চেপে ধরে সড়কের পাশের ঝোঁপের আড়ালে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এসময় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন ওই তরুণী।

জ্ঞান ফেরার পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান চিকিৎসা নিতে।

ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সংগঠনও নানা কর্মসূচি পালন করে।

ওই তরুণীর কাছে বর্ণনা শুনে ৮ জানুয়ারি গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মজনুকে। ওই তরুণী মজনুকে ধর্ষণকারী হিসেবে শনাক্ত করার পর ১৬ জানুয়া‌রি আদালতে স্বীকারো‌ক্তিমূলক জবানব‌ন্দিও দেন এই ব্যক্তি।

দুই মাস পর গত ১৬ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডি‌বির প‌রিদর্শক আবু বকর সি‌দ্দিক আদালতে অভি‌যোগত্র দা‌খিল ক‌রেন। তাতে শুধু মজনুকেই আসামি করা হয়। রাষ্ট্রপ‌ক্ষে সাক্ষী করা হয় ১৬ জনকে। ভুক্তভোগীর পোশাক ও মোবাইল ফোনসহ ২০টি আলামত জমা দেওয়া হয় আদালতে।

এরপর বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব‌্যুনালে বদলি করা হয়।