কুকুর অপসারণের বদলে বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচি চালুর আহ্বান

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতি বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণ না করে কুকুর নিয়ন্ত্রণে বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচি চালুর আহ্বান জানিয়েছে প্রাণি অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2020, 04:32 PM
Updated : 17 Sept 2020, 05:45 PM

বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অভয়ারণ্য, স্টেলা, পিপল ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি প্রাণি কল্যাণ সংগঠন আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এ আহ্বান জানান।

সমাবেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) চেয়ারম্যান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ৩০ হাজার কুকুর অন্যত্র অপসারণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা শুধু অবৈজ্ঞানিক ও অমানবিকই নয় সম্পূর্ণ বেআইনি। প্রাণি কল্যাণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী এই কার্যক্রম সম্পূর্ণ বেআইনি।”

সিটি করপোরেশনের প্রতি কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচি চালুর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ করা হচ্ছে। যদি উত্তর সিটি করপোরেশনে এই প্রকল্প চলতে পারে তাহলে দক্ষিণে কেন এই প্রকল্প চলবে না? আমাদের বিরোধ নিরসনের ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। আমরা চাই তরুণদের সঙ্গে তিনি বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। কুকুর আপসারণ নয়, জলাতঙ্ক টিকা ও বন্ধ্যাত্মকরণ কর্মসূচি চালু করুন। লোকবল প্রয়োজন হলে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে আমরা সাহায্য করব।”

কুকুর অপসারণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে আইনি লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “শেষ পর্যন্ত যদি দক্ষিণ সিটি তার এই অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে তাহলে আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের যথেষ্ট আইনগত দিক আছে। আমাদের প্রতিবাদের ভাষাটুকু আদালত পর্যন্ত নিয়ে যাব।”

সমাবেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও র‌্যাবিস ইন এশিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে অনেক দিন ধরে বাংলাদেশে জলাতঙ্ক নির্মূলের টিকা দিয়ে কুকুরগুলোকে নিরাপদ করা হয়েছিল। এখন সেখানে তাদের সঙ্গে যুক্তি-পরামর্শ না করে এককভাবে সিটি করপোরেশন যা করছে তা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ১৬ লাখ কুকুর আছে। এই ১৬ লাখ কুকুরকে ঘৃণায় পরিণত না করে তাদের সম্পদে পরিণত করা যায়। কুকুরের মতো ভালো প্রহরী আর হতে পারে না। তাদেরকে নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কুকুর বিতাড়ন না করে ভালো হবে আমাদের যে প্রাণি বৈচিত্র্য আছে কুকুরকে তার অংশ করে তোলা।”

অভয়ারণ্যের চেয়ারম্যান রুবাইয়া আহমেদ বলেন, “ঢাকা সাউথ সিটি করপোরেশন কুকুর অপসারণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা গত ১০ বছরে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ, প্রাণি ও পরিবেশ কল্যাণ কর্মীদের প্রচেষ্টায় একটা বুড়ো আঙুল দেখানো ছাড়া আর কিছু না। যে কাজটা করা হচ্ছে সেটা অবৈজ্ঞানিক, সেটা বেআইনি এবং সেটা বাংলাদেশে গত ১০ বছরে জলাতঙ্কমুক্তকরণ যে কর্মসূচি চালিয়ে আসছে, সেটা এক নিমিষে নির্মূল করে দিতে পারে।”

পিপল ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্থপতি রাকিবুল হক এমিল বলেন, “কুকুর অপসারণ কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। এ ধরনের কাজ বহু আগে থেকেই হয়েছে, কিন্তু ঢাকা শহরে কি কুকুর কমেছে? কুকুর নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুযায়ী এগোতে হবে। কুকুর সরানোর জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তা দিয়ে কুকুর বন্ধ্যা করা যায়।”

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান চন্দ্র পাল বলেন, “প্রকৃতি ও প্রাণি সার্বিকভাবেই আমাদের পরিবেশ। এই প্রাণিকূলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল কুকুর। এই কুকুরগলোকে বাদ দিয়ে পরিবেশ রক্ষা হবে না। এজন্য আমরা যারা পরিবেশবাদী আন্দোলন করি, প্রত্যেকে আমরা এই আন্দোলনের সাথে আছি এবং আমাদের সমর্থন থাকবে।”