লকডাউনের মধ্যে নিজেদের পয়সায় খাবার কিনে ওই কুকুরগুলো খাওয়ানো শিক্ষার্থীরা বলছেন, সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লোকজন গাড়ি নিয়ে এসে টিএসসি এলাকা থেকে ১০-১২টি কুকুর ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে তুলে নিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, রমনা পার্ক থেকে কুকুর অপসারণ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণিদের খাবার ও চিকিৎসা সেবাসহ সার্বিক দেখাশুনা করে ‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ক্লাব অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
টিএসসি এলাকায় এই কুকুরগুলোকে না পেয়ে নগর ভবনে ছুটে যান দীর্ঘ দিন কুকুরগুলোকে খাবার দিয়ে লালন-পালন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
কুকুরগুলোর সন্ধানে নগর ভবনে গিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সেখানে গিয়ে জানতে পারি, তাদের রমনা পার্ক থেকে কুকুর ধরার কথা ছিল, কিন্তু ভুলে আমাদের কুকুরগুলোকে তারা ধরে নিয়ে মাতুয়াইলে ফেলে দিয়ে আসছে।”
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, “এভাবে কুকুর অপসারণ বা নিধন করা সম্পূর্ণ বেইআইনি। আমরা শিক্ষার্থী, আমাদের টাকা-পয়সা ও রকম নাই। তারপরও আমরা ভাগে ভাগে কুকুর ধরে ধরে বন্ধ্যাত্মকরণ করেছি, টিকা দিয়েছি।
“কুকুরগুলো অনেক মিশুক। ডাকলেই কাছে আসে, যে কেউ আদর করতে পারে। সেই কুকুরগুলোকে তারা তুলে নিয়ে গিয়ে মাতুয়াইলে ফেলে আসল? এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা শিগগিরই প্রতিবাদ কর্মসূচি ডাকব।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রমনা পার্ক থেকে কুকুর অপসারণের কথা জানালেও টিএসসির এসব কুকুরের বিষয়ে কিছু বলছে না।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টিএসসির প্রতিটি কুকুর আমাদের পরিচিত। তাদের আমরা বিভিন্ন নামে ডাকি। কিন্তু টিএসসিতে এখন ১০ থেকে ১২টা কুকুর মিসিং। আমরা নগর ভবনে গেলে তারা বলেন গতকাল মোট ১৬টা কুকুর ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাম্পাস থেকে নেওয়া হয়েছে ৪-৫টা। তাহলে বাকি কুকুরগুলো গেল কোথায়?”
তিনি বলেন, “এ কুকুরগুলোকে তুলে নেওয়ার কোনো মানে হয় না। এগুলো বেওয়ারিশ কুকুর নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগুলো লালন পালন করে। এদের অনেকগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, কিছু কুকুর বন্ধ্যাত্মকরণ করাও ছিল।”
তবে নগর ভবন ঘুরে আসা শিক্ষার্থীরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের কর্মীদের রমনা পার্ক থেকে কুকুর ধরার কথা থাকলেও তারা ভুলে টিএসসি থেকে ধরেছেন বলে তাদের কাছে স্বীকার করেছেন।
ফেইসবুকে লাইভে প্রতিবাদ জানিয়ে রুবাইয়া রহমান বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, এখানকার কিছু কুকুর কারা যেন তুলে নিয়ে গেছে। আমরা বিষয়টি ইনভেস্টিগেট করতে এসেছি। আমাদেরকে সিটি করপোরেশন থেকে বার বার বলা হচ্ছে কোনো কুকুর কোথাও সরানো হচ্ছে না। কিন্তু এসব কী হচ্ছে?
“এখানকার স্টুডেন্টরা এগুলো লালন পালন করে। তারা কুকুরগুলোকে নিয়ে কোনো অভিযোগ করছে না। কাদের কথায় সিটি করপোরেশন এগুলো তুলে নিয়ে গেল? কুকরগুলোকে বিপজ্জনক ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করে কোথায় ফেলে দিয়ে আসছে, আমরা জানি না। এটা খুবই লজ্জাজনক।”
রাকিবুল হক এমিল বলেন, “এখানকার কুকরগুলো খুবই ফ্রেন্ডলি। শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের একটা সম্পর্ক আছে। অনেক দিন ধরে কুকুরগুলো এখানেই বেড়ে উঠেছে। এরা কমিউনিটি ডগ, এই টিএসসি চত্বরে এরা পেট অ্যানিম্যালের মতোই। বন্ধ্যা করা, জলাতঙ্কের কোনো ভয় নেই এমন কুকুরগুলোকে তুলে নিয়ে যাওয়া একদমই ঠিক হয়নি।”
টিএসসি এলাকার কুকুরগুলোকে বন্ধ্যাত্মকরণ ও টিকা দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপকে এ কে এম গোলাম রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা সিটি করপোরেশনের বিষয়। কোনো কিছু হয়ে থাকলে তারা (শিক্ষার্থী) সিটি করপোরেশনের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
“পরিবেশ ঝুঁকি, স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও প্রাণিদের প্রতি আমাদের যে একটি নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে, সব কিছু বিবেচনা করেই এগুলো করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেকে কুকুর লালন পালন করে, এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কোনো সম্পর্ক নাই।”