রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ মামলায় রায়ের এই দিন ঠিক করে দেন।
২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে জনির মৃত্যুর পর ওই বছর অগাস্ট মাসে তার ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি আদালতে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- পল্লবী থানার তখনকার এসআই জাহিদুর রহমান খান, এএসআই রাশেদুল ইসলাম, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু, পুলিশের সোর্স রাসেল ও সুমন।
তাদের মধ্যে এসআই জাহিদ ও সুমন কারাগারে আছেন। এএসআই রাশেদুল জামিনে রয়েছেন; বাকি দুজন জামিনে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছেন।
এ মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৪ জন সাক্ষীর বক্তব্য শুনেছে আদালত। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার পর ১৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।
বাদীপক্ষে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সাভির্সেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবী আবু তৈয়ব মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মাঝপথে যুক্তিতর্ক থমকে ছিল। চলতি মাসে আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হলে সোমবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।”
আসামিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেছেন আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ । আর রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কেএম সাজ্জাদুল হক শিহাব, তাপস পাল মামলার শুনানি করেন।
জনির ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি ২০১৪ সালের ৭ অগাস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে এই মামলা করলে বিচারক এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, পুলিশের সোর্স সুমন মাতাল অবস্থায় ওই অনুষ্ঠানে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করলে জনি তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন। তখন ঝগড়ার এক পর্যায়ে জনি চড় মারলে সুমন ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে চলে যান।
আধা ঘণ্টা পর এসআই জাহিদসহ কয়েকজন পুলিশ এসে ওই অনুষ্ঠান থেকে জনিকে থানায় নিয়ে যান। সেখানে তার উপর নির্যাতন চলে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
“জনিকে পল্লবী থানার হাজতে নিয়ে এসআই জাহিদসহ অন্য আসামিরা হকিস্টিক, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে এবং জনির বুকের ওপর উঠে লাফায়। জনি পানি চাইলে জাহিদ তার মুখে থুথু ছিটিয়ে দেন।”
নির্যাতনে জনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, আগেই মৃত্যু হয়েছে জনির।
মামলায় বলা হয়, ‘নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে’ আসামিরা পল্লবীর ইরানি ক্যাম্প ও রহমত ক্যাম্পের মধ্যে ‘মারামারির মিথ্যা কাহিনী’ তৈরি করেছিল। ওই মারামারিতেই রকিসহ কয়েকজন গুরুতর আহত ও জনি নিহত হন দাবি করে এসআই শোভন কুমার সাহা (আসামি) পল্লবী থানায় একটি মামলাও করেছিলেন।
পল্লবী থানার তৎকালীন ওসি জিয়াউর রহমান ওই মামলাটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে ‘ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যান’ বলে বাদীর আর্জিতে উল্লেখ করা হয়।
আদালতের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুই সোর্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।
২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা।
২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী, নির্যাতন এবং তার ফলে মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত হলে ন্যূনতম যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আরও দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিতে পারে আদালত।
ইশতিয়াক হোসেন জনির মা খুরশীদা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এ মামলার রায়ে আইনে নির্ধারিত সর্ব্বোচ শাস্তি চাই। আমার জীবিত দুই সন্তনের নিরাপত্তা চাই সরকারের কাছে।”
জনির ভাই রকি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জামিন নিয়ে পালিয়ে যাওয়া মামলার আসামিরা এলাকায় মাদক ব্যবসা করছে এবং আমাদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে।”
২০১৪ সালের জুলাই মাসে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজনকে মিরপুর থানায় নিয়ে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জনি হত্যা মামলার মূল আসামি এসআই জাহিদ। হাই কোর্টের আদেশে সুজন হত্যা মামলার কার্যক্রম এখন স্থগিত রয়েছে।