বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হল করোনাভাইরাস মহামারীকালে নমুনা পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতির মামলার বিচার।
Published : 27 Aug 2020, 08:18 PM
এই মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরী, তার স্ত্রী বরখাস্ত সরকারি চিকিৎসক সাবরিনা চৌধুরীসহ আটজন আসামি।
গত ২০ অগাস্ট আরিফুল-সাবরিনাসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন ঢাকার মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনছারী।
বৃহস্পতিবার তার আদালতেই সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী কামাল হোসেন। তিনি এজাহার সমর্থন করে জবানবন্দি দেন এবং আসামিদের সনাক্ত করেন।
এজাহারে বাদীর স্বাক্ষর এ সময় প্রদর্শনী হিসাবে নথিতে যুক্ত করার জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু আবেদন করেন।
শুনানির শুরুতে আসামি আরিফুল চৌধুরী ও সাঈদ চৌধুরীর পক্ষে তার আইনজীবীরা অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন জানিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর আবেদন করেন। তার বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সময় আবেদন নামঞ্জুর করে বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ নেন।
জবানবন্দি দেওয়ার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন কামালকে। কিন্তু তা শেষ হয়নি। এজন্য আদালত আগামী ৩ সেপ্টেম্বর অবশিষ্ট জেরা এবং পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করে দেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- জেকেজি হেলথকেয়ারের সিইও আরিফুল চৌধুরী, চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী, আরিফের বোন জেবুন্নেছা রিমা, জেকেজির সাবেক কর্মচারী হুমায়ুন কবির হিমু ও তার স্ত্রী তানজিলা পাটোয়ারী, জেকেজির কোঅর্ডিনেটর আবু সাঈদ চৌধুরী, জেকেজির কর্মচারী বিপ্লব দাস ও শফিকুল ইসলাম রোমিও।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিল ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ার।
কিন্তু জুনের শেষ দিকে অভিযোগ আসে, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল জেকেজি। নমুনা পরীক্ষা না করে রোগীদের ভুয়া সনদও তারা দিচ্ছিল।
এ বিষয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকার কামাল হোসেনের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে তাদের কম্পিউটার থেকে চারজন প্রবাসীরসহ ৪৩ জনের নামে তৈরি করা করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট পাওয়া যায়।
পরদিন কামাল হোসেন বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন ওই দুজনের বিরুদ্ধে। সরকারি নাম ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ, কাজে অবহেলার মাধ্যমে জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রামণ বিস্তারের ঝুঁকি তৈরি, করোনাভাইরাসের সনদ জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয় সেখানে।
হুমায়ুন ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে তেজগাঁও থানা পুলিশ জেকেজির সিইও আরিফুল চৌধুরী, তার বোন জেবুন্নেছাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে ১২ জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
১৩ জুলাই এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আরিফুল ও সাবরিনাকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। এর মধ্যে একদিন সাবরিনা ও আরিফুলকে মুখোমুখি করেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সাবরিনা অস্বীকার করলেও জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে তার বেতন নেওয়ার তিনটি স্লিপ পুলিশের হাতে এসেছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গ করায় ইতোমধ্যে সাবরিনাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, তদন্তকালে জেকেজির কম্পিউটার থেকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ১৯৮৫টি ভুয়া রিপোর্ট তারা পেয়েছেন।
“এই জালিয়াতির মাস্টার মাইন্ড আরিফুল। এক্ষেত্রে অন্যরা বিভিন্নভাবে তাকে সহযোগিতা করত। হিরু ছিল গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তার হাত দিয়ে তৈরি হত ভুয়া সনদ।”
গত ৫ আগস্ট এ মামলায় ঢাকা সিএমএম আদালতে ডিবির পরিদর্শক লিয়াকত আলী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তারপরই শুরু হয় বিচার।