ঢাকায় দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ দাবি করেছে, তারা জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে ঘর ছেড়েছিলেন।
Published : 18 Aug 2020, 02:24 PM
সোমবার সন্ধ্যার পর ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) শাখা জানিয়েছে।
এরা হলেন- সাফফাত ইসলাম ওরফে আবদুল্লাহ ওরফে উইলিয়াম ওরফে আল আরসালান ওরফে মেহেমেদ চাগরি বেগ (১৮) ও ইয়াসির আরাফাত ওরফে শান্ত (২০)।
সাফফাতের বাসা ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে, ইয়াসিরের বাসা কেরানীগঞ্জে। সাফফাত সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার বিসিএসআইআর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ইয়াসির ঢাকার আজিমপুর সাফির আইডিয়াল কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী দেবেন।
তারা দুজনই গত ৪ অগাস্ট নিখোঁজ হন বলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা ও নিউ মার্কেট থানায় আলাদা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পরিবার। দুই পরিবারের মধ্যে অবশ্য কোনো যোগাযোগ নেই।
সিটিটিসির উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হিজরতের (ধর্মের জন্য গৃহত্যাগ) উদ্দেশ্যে তারা ৪ অগাস্ট বাসা থেকে বের হন। অন্য সদস্যদের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার চেষ্টার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও নাস্তিকদের হত্যা করাই তাদের মূল টার্গেট। তারা ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল।”
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল, চাকু ও জঙ্গি তৎপরতা সংক্রান্ত নির্দেশনামূলক নথি পাওয়া গেছে বলে সিটিটিসির এই কর্মকর্তা জানান।
সাইফুল বলেন, “তারা নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য। তারা সাত জনের একটি স্লিপার সেল গঠন করেছে যার নাম দিয়েছে ‘এফজেড ফোর্স’।
এই নব্য জেএমবিই চার বছর আগে গুলশান হামলা চালিয়েছিল। তারপর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে দলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লেও এর অনুসারীরা ফের সংগঠিত হতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলে আসছেন।
এক দিনেই নিখোঁজ
সাফফাতের বাবা নিউ মার্কেট থানায় এবং ইয়াসিরের বাবা কেরানীগঞ্জ থানায় জিডি করে গত ৪ জুলাই নিজ নিজ সন্তানের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানান।
৭ জুলাই কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ইয়াসির আরাফাতের বাবা ইউসুফ আলীর করা জিডিতে বলা হয়, ৪ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টায় ল্যাপটপ ঠিক করার জন্য গুলিস্তানে যাওয়ার কথা বলে কেরানীগঞ্জের নতুন সোনাকান্দার বাসা থেকে বেরিয়ে যান ইয়াসির। বেলা আড়াইটায় ছেলের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। এরপর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছিলেন।
সাফফাতের বাবা শহীদুল ইসলাম লিটন নিউ মার্কেট থানায় ৪ জুলাই জিডি করেন। তাতে তিনি বলেন, সাফফাত সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাইকেল চালানোর কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি।
সাফফাতের বাবার সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি এখন ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ জানিয়ে কথা বলতে চাননি।
অন্যদিকে ইয়াসিরের বাবা পেশায় প্রাইভেট গাড়িচালক ইউসুফ বলেন, “এতদিন ছেলের সন্ধান পাইনি। এখন পাওয়া গেছে, পুলিশ হেফাজতে আছে। এটাই বড় সান্ত্বনা যে ছেলেটা জীবিত আছে। সে যদি দোষ করে থাকে, তা হলে নিয়মানুযায়ী যেটা হওয়ার সেটা হবে।”
ছেলের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার কোনো লক্ষণ চোখে ধরা পড়েনি বলে জানান ইউসুফ। তিনি বলেন, মায়ের বকা শুনে মন খারাপ অবস্থায় ঘর থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি ইয়াসির।
ইউসুফ বলেন, শুধু গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ায় বাসার পাশে একটি চা বিস্কুটের দোকান দিয়েছেন তিনি, ওই দোকানে ইয়াসিরকে বসতে বলেছিলেন তার মা।
“নিখোঁজ হওয়ার ২/৩ দিন আগে তার মা আমার সাথে চায়ের দোকানে বসতে ধমক দিয়ে বলেছিল, ‘এখন পরীক্ষা নাই, কবে পরীক্ষা হয়, তার ঠিক নাই (এইচএসসি পরীক্ষা করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে স্থগিত হয়ে আছে)। বাবার সাথে একটু দোকানে বসলে সংসারে উপকার হয় ‘। এরপর থেকে মন খারাপ, তারপরেই নিখোঁজ।”
ছেলের স্বভাবের বিষয়ে ইউসুফ বলেন, “কখনও কারও সাথে বেয়াদবি করেছে, এমন কথা কেউ বলেনি। বাসায় তার কোনো বন্ধুও আসত না।”
ছেলের সঙ্গে গ্রেপ্তার সাফফাতকে চেনেন না জানিয়ে ইউসুফ বলেন, “তাকে আমি চিনি না। কখনও আমাদের বাসায় আসেওনি। তার পরিবারের সাথেও আমাদের কারও যোগাযোগ নাই।”
দুজনই রিমান্ডে
গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার সাফফাত ও ইয়াসিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলার পর ঢাকার আদালতে পাঠায় পুলিশ।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন হেফাজতে রাখার আবেদন জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
শুনানি শেষে বিচারক বাকী বিল্লাহ পাঁচ দিন হেফাজতের আদেশ দেন বলে সংশ্লিষ্ট আদালতে পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কমর্কর্তা এসআই হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়ায়নি।
“বিচারক তাদের বলেছিলেন যে তাদের কিছু বলার আছে কি না? তারা প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল।”
এদিকে সাফফাত ও ইয়াসিরের সঙ্গে আর যারা জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি কর্মকর্তা সাইফুল।