একাদশে ভর্তি কার্যক্রম শুরু রোববার

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিলম্বিত একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম রোববার সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2020, 09:40 AM
Updated : 8 August 2020, 09:40 AM

দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে আগামী ২০ অগাস্ট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

এবার শুধু অনলাইনের (www.xiclassadmission.gov.bd) মাধ্যমে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করা যাবে।

সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী ১৩ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি আগেই জানিয়েছে।

২০১৫ সাল থেকে ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে।

এবার ৭ হাজার ৪৭৪টি সরকারি-বেসরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ২৫ লাখ আসন রয়েছে। আর মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী। তারাই এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে আবেদন করবেন। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও আট লাখ আসন ফাঁকা থাকবে।

নয়টি সাধারণ বোর্ড এবং মাদ্রাসা বোর্ডের কোন কোন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বোর্ডভিত্তিক সেই তালিকাও www.xiclassadmission.gov.bd প্রকাশ করা হয়েছে।

একজন শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে পাঁচটি কলেজ পছন্দক্রম অনুসারে আবেদন করতে হবে। সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন করা যাবে। শিক্ষার্থীর মেধা ও পছন্দ্ক্রম অনুসারে তাকে নির্দিষ্ট কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত করা হবে।

নগদ, সোনালী ব্যাংক, টেলিটক, বিকাশ, শিউর ক্যাশ ও রকেট’র মাধ্যমে ১৫০ টাকা আবেদন ফি জমা দিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।

একাদশে ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবেন। আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ণদের ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়স হবে ২২ বছর।

এবার ৯৫ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, যা মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। মেধার ভর্তির পর পাঁচ শতাংশ আসন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে তা কার্যকর থাকবে না।

মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে যেন সমস্যা না হয় সেদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি

তিনি বলেছেন, “কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই হয়ত ভর্তির ফি একসাথে দিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তারা যেন কিস্তিতে ভর্তি ফি দিতে পারে সে ব্যাবস্থা রাখতে হবে।”

কবে কী

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি জানিয়েছে, ৯ অগাস্ট সকাল ৭টা থেকে ২০ অগাস্ট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। ২৫ অগাস্ট রাত ৮টায় প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে।

প্রথম তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ২৬ থেকে ৩০ অগাস্টের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন (যে কলেজের তালিকায় নাম আসবে ওই কলেজেই যে শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন তা এসএমএসে নিশ্চিত করা) করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে আবেদন বাতিল হবে।

৩১ অগাস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদন নেওয়া হবে। পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম মাইগ্রেশনের ফল এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়।

৫-৬ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চয়ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে আবেদন বাতিল হবে।

৭-৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন নিয়ে পছন্দক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল এবং তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ সেপ্টেম্বর।

১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত তৃতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চয়ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে আবেদন বাতিল হবে।

১৩ সেপ্টেম্বর রাত কলেজভিত্তিক চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। আর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তি হতে হবে।

আবেদনের নিয়ম

টেলিটক, বিকাশ, শিওরক্যাশ, নগদ, সোনালী ব্যাংক বা রকেট’র মাধ্যমে ১৫০ টাকা আবেদন ফি জমা দেওয়ার পর আবেদনকারীকে www.xiclassadmission.gov.bd গিয়ে Apply Online বাটনে ক্লিক করে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষার রোল নম্বর, বোর্ড, পাসের সাল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিতে হবে। এসব তথ্য সঠিক হলে আবেদনকারী এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ দেখতে পাবেন।

এরপর ফি পরিশোধের সময় দেওয়া শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের মোবাইল নম্বর এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কোটা দিতে হবে।

এরপর ভর্তিচ্ছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রুপ, শিফট এবং ভার্সন সিলেক্ট করতে হবে। এভাবে সর্বোচ্চ ১০টি এবং সর্বনিম্ন পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিলেক্ট করতে হবে। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পছন্দক্রম নির্ধারণে করে দিতে হবে।

এরপর Preview Application বাটনে ক্লিক করলে আবেদনকৃত কলেজগুলোর তথ্য ও পছন্দক্রম দেখা যাবে। সব তথ্য ঠিক থাকলে Submit বাটনে ক্লিক করতে হবে। আবেদনটি সফলভাবে সাবমিট হলে যোগাযোগের জন্য দেওয়া মোবাইল নম্বরে একটি নিশ্চিতকরণ এসএমএস যাবে, যেখানে একটি সিকিউরিটি কোড থাকবে। এই কোডটি সতর্কতার সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ আবেদন সংশোধন ও ভর্তি সংক্রান্ত কাজে তা প্রয়োজন হবে।

আবেদনকারী চাইলে আবেদনের ফরম ডাউনলোড বা প্রিন্ট করে রাখতে পারবেন।

উল্লিখিত নির্দেশনা অনুসরণ করে সব তথ্য এন্ট্রি করার পরেও শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য বা জিপিএ দেখতে না পেলে ফি জমা দেওয়ার সময় যে ট্রানজেকশন আইডি দেওয়া হয়েছে সেটি এন্ট্রি করতে হবে। এক্ষেত্রে ফি পরিশোধে যে অপারেটর (টেলিটক, বিকাশ, শিওরক্যাশ, নগদ, সোনালী ব্যাংক বা রকেট) ব্যবহার করা হয়েছে তা নির্বাচন করে দিতে হবে। এর ৩০ মিনিট পর আবেদন করা যাবে।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা এদের সন্তানদের সন্তানদের জন্য কোটায় ভর্তি হতে চাইলে শিক্ষার্থী তথ্য-ছকের নির্দিষ্ট স্থানে FQ কোটা সিলেক্ট করতে হবে।

একজন আবেদনকারী সর্বোচ্চ পাঁচবার কলেজের পছন্দক্রম এবং কলেজ পরিবর্তন করতে পারবেন।

অন্যান্য বিষয়

আবেদন ফি পরিশোধ করার সময় দেওয়া মোবাইল নম্বরটি যোগাযোগের নম্বর হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এজন্য সব সময়ের জন্য সচল মোবাইল নম্বর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।

এসএসসির জিপিএ’র ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। সমান জিপিএ প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড বলছে, একজন শিক্ষার্থীকে মেধা, প্রযোজ্যক্ষেত্রে কোটা এব পছন্দক্রম অনুযায়ী একটি কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচন করা হবে।

“নির্বাচিত শিক্ষার্থী নিজেই অনলাইনে বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য ফি বাবদ ২০০ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক ভর্তি নিশ্চয়ন করবে। একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ দুইবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাইগ্রেশনের জন্য বিবেচিত হবে, এক্ষেত্রে মাইগ্রেশন সব সময় শিক্ষার্থীর পছন্দ ক্রামনুসারে উপরের দিকে যাবে।”

বন্ধ ভর্তির অবৈধ পথ

২০১৫ সাল থেকে অনলাইনের মাধ্যমে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরুর পর তদবির বা অবৈধ পন্থায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন।

বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।

ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. হারুন-আর-রশিদ শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনলাইনে ভর্তি শুরুর আগে নামী কলেজগুলোতে ভর্তিতে অবৈধ পথ অনেকে খোঁজ করতেন।

“ভর্তি কার্যক্রম অনলাইন হওয়ায় সেই পথ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। আগে কলেজগুলো নানাভাবে বিজ্ঞাপন দিয়েও শিক্ষার্থী ভর্তি করাতো।”

অধ্যাপক হারুন বলেন, “শিক্ষার্থীদের মেধা, পছন্দক্রম এবং প্রযোজ্যক্ষেত্রে কোটা- এই তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সফটওয়্যার শিক্ষার্থীকে কলেজ বাছাই করে দেয়।

“এখানে কারো কিছু করার নেই, প্রতিষ্ঠানেরও কোনো হাত নেই। ফলে কিছু ভুঁইফোড় কলেজ এখন শিক্ষার্থী কম পাচ্ছে, শিক্ষার্থীরাও সেসব কলেজকে তাদের পছন্দক্রম রাখে না।”

শিক্ষার্থীরা কলেজগুলোর বিগত বছরের ফলাফল এবং শিক্ষকদের ‘কোয়ালিটি’ দেখে আবেদনের সময় পছন্দক্রম হিসেবে কলেজ বাছাই করেন বলে মনে করেন ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক।