কুয়েতে বাংলাদেশি এমপিকে আটক

মানবপাচার ও ভিসা বাণিজ্যের অভিযোগে সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলকে আটক করেছে কুয়েত সিআইডি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2020, 01:49 PM
Updated : 7 June 2020, 08:46 PM

শনিবার রাতে তাকে কুয়েতের মুশরেফ এলাকার থেকে তাকে আটক করা হয় বলে স্থানীয় বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন।

তবে পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম দাবি করেছেন, তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের আগে বাংলাদেশের কুয়েত দূতাবাসের সঙ্গে বিষয়টি ‘স্পষ্ট’ হয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাকে রাতে বাসা থেকে নিয়ে গেছে কুয়েত সিআইডি। তবে কী কারণে নিয়েছে আমাদের কিছু জানায়নি।”

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলের স্ত্রী সেলিনাও সংরক্ষিত আসনের এমপি।

সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো বার্তায় সেলিনা বলেন, “গ্রেপ্তার সম্পর্কিত যে তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে, তা ঠিক নয়। তিনি সেখানে কোনো মামলার আসামি নন।

“কুয়েত সরকারের তাদের নিয়ম অনুযায়ী তার ব্যবসায়িক বিষয়ে আলোচনার জন্য তাকে সেখানকার সরকারি দপ্তর বা সিআইডিতে ডেকে নিয়েছে।”

পাপুলের বিরুদ্ধে উঠা মানবপাচারের অভিযোগ তদন্ত হওয়ার বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

সে সময় কুয়েত সিআইডির বরাত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কুয়েতি পত্রিকা আল কাবাস ও আরব টাইমস।

আল কাবাসের খবরে বলা হয়, কুয়েতে মানবপাচার ও ‘ভিসা বাণিজ্যে’ জড়িত থাকার অভিযোগে তিন বাংলাদেশির একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার পর একজনকে গ্রেপ্তার করেছে সেখানকার সিআইডি। বাকি দুজন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন; তাদের মধ্যে একজন সংসদ সদস্য।

ওই চক্রটি ২০ হাজার জনকে কুয়েতে পাচার করে ৫০ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার (১৩শ কোটি টাকা) হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ধারণা দেওয়া হয় ওই দুই সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে।

শহীদ ইসলাম পাপুল

কুয়েতি গণমাধ্যম ওই সাংসদের নাম উল্লেখ না করলেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এমপি পাপুলের নাম উঠে আসে, যিনি কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানি এবং দেশে আর্থিক খাতের ব্যবসায় যুক্ত।

সে সময় ওই প্রতিবেদনগুলোকে ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, “যে সংসদ সদস্যের কথা বললেন, “আমরা শুনেছি যে এটা ফেইক নিউজ।

“সরকারের কাছে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। আমাদের মিশন এখনো খবর দেয়নি, আমরা এখনো জানি না।”

ওই সময় আল কাবাস থেকে উদ্ধৃত করে আরব টাইমস পরে আরেক প্রতিবেদনে লিখেছে, কুয়েত সরকারের কাজ পেতে কর্মকর্তাদের পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন এমপি পাপুল। তিনি তার সম্পদের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিয়ে এক মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা শুরু করেছেন।

সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত এমপি পাপুল। তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির ধারণা।

কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সেবা খাত, নিরাপত্তা, নির্মাণ, আবাসন, পরিবহন, তেল শোধন প্রভৃতি খাতে কার্যক্রম রয়েছে মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপের। কুয়েতের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ব্যবসায় রয়েছে তাদের।