কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এর মধ্যে নিয়মিতভাবে বেতন আদায়ে ভিন্ন পন্থা বেছে নিয়েছে ঢাকার সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
Published : 22 Apr 2020, 06:18 PM
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অনেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বেতন পরিশোধ নাও করতে পারেন, তা মাথায় রেখে বিকাশ, রকেট, নগদের মত মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।
তবে এই মহামারীর মধ্যে যেমন করেই হোক বেতন আদায় করা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন কয়েকজন অভিভাবক।
আর প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হামিদা আলী বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন না নিয়ে তাদের কোনো উপায় নেই। কারণ তাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষকই এমপিও এমনকি সরকারের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না।
ঢাকার উত্তরা, বনানী, মিরপুর, মালিবাগ ও বারিধারায় সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাখাগুলোতে সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন এক হাজার ৩০০ শিক্ষক।
বারিধারা শাখায় অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই মহামারীর মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটি বেতন নেওয়া বন্ধ করেনি। প্রতি মাসে বেতন নিতে বিকাশের মাধ্যমে বেতন পরিশোধের সিস্টেম চালু করে তা জানিয়ে এসএমএস করেছে, এটা ‘মেনে নেওয়ার মতো না’।
অভিভাবককে মোবাইলে পাঠানো এসএমএসে বলা হয়েছে,
"Dear parents, Request to pay Tuition Fees by 30 Apr without fine by bkash no 01766975719 as following instruction:
1. Go to payment option.
2. Add student ID number (see paybook), short name, class, month's name (like Mar/Apr) in reference.
3. Counter 1
For details visit spbaridhara.eduplusbd.com"
SOUTH POINT SCHOOL & COLLEGE
spbaridhara.eduplusbd.com
এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হামিদা আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণার পর থেকে তাদের সবগুলো শাখার শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন, বাড়ির কাজ দিচ্ছেন এবং সেগুলো দেখছেনও।
“আমাদের কোনো শিক্ষক সরকার থেকে একটি টাকাও পান না। টিউশন ফি আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস। এ থেকেই শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়, অন্যান্য খরচ যোগান দেওয়া হয়।”
কোনো খরচ ছাড়াই যেন বিকাশে বেতন পরিশোধ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সামনে রোজার মাস। আমরা বেতনটা না নিলে শিক্ষকদের বেতন দেব কীভাবে?
“তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে কারও বেতন পরিশোধে যদি সমস্যা হয়, আমাদের তা জানালে আমরা বিবেচনা করব।”
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে গত ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী ৫ মে পর্যন্ত এই ছুটি চলবে। তার আগে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বেতন না নিলে শিক্ষকদের বেতন দিতে পারবে না। অন্যদিকে এই পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবকেরও সন্তানদের টিউশন ফি চালিয়ে যাওয়া কষ্ট হচ্ছে।
“সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কী করা যায়, আমরা বসে সে বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেব।”
এদিকে বিকেলে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিয়ে খবর প্রকাশের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে ফোন করে একজন অভিভাবক দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হামিদা আলীর বক্তব্য ঠিক নয়।
“অনলাইনে কোনো ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মিডটার্মের একটি সিলেবাস অনলাইনের মাধ্যমে অভিভাবকদের কাছে পাঠানো হয়েছে মাত্র।”
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত জুনিয়র লেভেলের ক্লাস অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে না, কারণ এসব ক্লাসের শিক্ষার্থীরা অনেট ছোট।
স্কুল বন্ধ থাকায় ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন জানিয়ে ওই শিক্ষক বলেন, “আমার জানামতে পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির কিছু ক্লাস অনলাইনের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে।”