কোভিড-১৯: একদিনে ৬ মৃত্যু, আক্রান্ত চারশ ছাড়াল

এক দিনে আরও ছয়জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৭ জন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2020, 08:55 AM
Updated : 10 April 2020, 12:25 PM

শুক্রবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১ হাজার ১৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আরও ৯৪ জনের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪২৪ জন।

গত এক দিনে নতুন করে কারও সুস্থ হওয়ার খবর আসেনি। এখন পর্যন্ত মোট ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ ও একজন নারী।

তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, দুজনের বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, একজন সত্তরোর্ধ্ব এবং একজনের বয়স ৯০ বছরের বেশি।

মৃত এই ছয়জনের মধ্যে তিন জন ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা, দুই জন নারায়ণগঞ্জের, অন্য একজন পটুয়াখালীর।

নতুন করে আক্রান্ত ৯৪ জনের মধ্যে ৬৯ জন পুরুষ ও ২৫ জন নারী। তাদের ৩৭ জনই ঢাকার বাসিন্দা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫ জন যাত্রাবাড়ী এলাকার।

নারায়ণগঞ্জকে বলা হচ্ছে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ‘নতুন এপিসেন্টার’, সেখানে আরও ১৬ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে। বাকিরা অন্যান জেলায়।

নতুন আক্রান্তদের মধ্যে চারজনের বয়স ১০ বছরের নিচে, ৬ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ২৯ জন ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৬ জন ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এবং ১৩ জন ষাটোর্ধ্ব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সানিয়া তহমিনা ব্রিফিংয়ে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৯৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হলেও পরীক্ষা হয়েছে ১১৮৪ র। আগের দিনের তুলনায় নমুনা সংগ্রহ ৩১ শতাংশ বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা বেড়েছে ১৮ শতাংশ।

এই সময়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার ৬৬০টি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম-পিপিই সংগ্রহ করা হয়েছে, ৪১ হাজার ৫০০টি বিতরণ হয়েছে এবং ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭২টি পিপিই মজুদ রয়েছে।

মোট ১২ হাজার ৬০১ জন এখন হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন জানিয়ে অধ্যাপক তহমিনা বলেন, “আমাদের যে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ক্যাপাসিটি, সেটা আগের চেয়ে বেড়েছে। সারা দেশে সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে কোয়ারেন্টিনের সেবা প্রদান করতে পারব ২৪ হাজার ৪৯২ জনকে।”

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, সারা দেশে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৫ জন চিকিৎসক ও ১ হাজার ৫৪ জন নার্সকে কোভিড-১৯ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে প্রতিনিয়ত নতুন তথ্য পাওয়ার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য পরামর্শও বদলে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

সানিয়া তহমিনা বলেন, “প্রতিনিয়ত গবেষণা করে বিভিন্ন রকম তথ্য উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে। সাত দিন আগে আমরা যে পরামর্শ দিয়েছি, সাত দিন পরে নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে। কারণ এটা একটা নতুন ভাইরাস। ‍

“সুতরাং যেটা আমরা বলছি, সেটা যদি অন্য কোনো সূত্র থেকে অন্যরকম পাওয়া যায়, সেটা আমরাও বলব। বুঝতে হবে যখন নভেল ভাইরাস আসে তখন নানারকম চেইঞ্জ হয়। এটাকে আপনারা আমাদের অজ্ঞতা হিসেবে না নিয়ে, আমরা যেটুকু জানতাম, সেটুকু আপনাদের কাছে বলেছি। যদি সেখানে কোনো পরিবর্তন হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা আমরা আপনাদের জানিয়ে দেব।”

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সোশাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

‘সোশাল ডিসট্যান্সিং’ শব্দবন্ধটির বাংলা অনুবাদে এদিন নতুন একটি শব্দবন্ধ প্রস্তাব করেন সানিয়া তহমিনা।

 “স্বাভাবিকভাবে আমরা বলছি সামাজিক দূরত্ব। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব করছি না আমরা, আমরা করছি শারীরিক দূরত্ব। এক জন আরেকজন থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্বে থাকব। সেটা বাসার বাইরে তো অবশ্যই, বাসার ভেতরেও এটা অবশ্যই থাকা উচিৎ।

“যারা অতি প্রয়োজনীয় কাজের সাথে যুক্ত, যেমন আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী, মিডিয়াকর্মী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নার্স, পানি বিতরণ করেন ওয়াসার লোক, তাদের বাইরে যেতে হয়। বাসায় ঢুকে তারা যেন কোনো মানুষ বা জিনিস স্পর্শ করার আগে কাপড় ধুয়ে ফেলেন, গোসল করে ফেলেন। আমরা জানি না বাসার ভেতরে কারা অ্যাসিমটপিক কারা আছেন, তাই বাসার ভেতরে আমরা তিন ফুট দূরত্বে থাকব।”

পুরনো খবর