নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন; সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়িতে থমকে গেছে সকাল-সন্ধ্যার হাঁটাহাঁটিও।
Published : 04 Apr 2020, 09:13 PM
রমনা পার্কে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ, বন্ধ করা হয়েছে রাজধানীর জিম-স্পা’র মতো ব্যায়ামগারগুলোও।
এই পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে ঘরবন্দি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের সঙ্গী হয়েছে ‘ইয়োগা’ বা ‘যোগব্যায়াম’। ঘরের মধ্যে এই ব্যায়াম শুরু করছেন অনেকেই। অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভিডিও আপলোড করছেন কেউ কেউ।
“করোনাভাইরাস সংক্রমণ যে কোনো মানুষের জীবনের জন্য এটা ভয়ঙ্কর হুমকি। এখন প্রতিদিন রুমে যোগব্যায়াম করি।”
গুলশানের ৮৭ নম্বর সড়কে সকালে দেখা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার ইফতেখার আহমেদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে এখন বাসায় থাকি সারাক্ষণ। আগে মর্নিং ওয়াক করতে বেরোতাম, এখন হচ্ছে না।
“আমি ঘরের মধ্যেই ব্যায়াম করি নিয়মিত। কিছুক্ষণ ছাঁদেও রোদের মধ্যে থেকে শরীরটাকে শুকিয়ে নেই। ড্রইংরুমে ব্যায়াম করি একা। যাকে বলে যোগব্যায়াম, ইয়োগা। ফেইসবুকে দেওয়া ভিডিও দেখে এটা করি।”
“এখন জিম বলুন, পার্ক বলুন অনেক কিছুই বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির কারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে অনেকে এখন ঘরে যোগব্যায়াম করছেন। ‘বালাসন’, ‘ত্রিকোণাসন, বৃক্ষাসন, তদাসন, পদাঙ্গুষ্ঠাসন, ধানুরাসন প্রভৃতি যোগব্যায়াম একা একা করলে শরীর সুস্থ থাকে এবং মন প্র্রফুল্ল থাকবে।”
রাজধানীর রমনা, বেইলি রোড, কাকরাইল, গুলশান, বনানীর অনেক বাসিন্দাই ঘরে বসে ব্যায়াম করার কথা জানিয়েছেন।
লকডাউনের প্রথম দিকে রাজধানীর রমনা পার্ক সকাল-বিকালে তিন ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে তা বাতিল করে পার্কে প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করেছে। পার্কের ফটকে টাঙানো নোটিশে লেখা রয়েছে, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে রমনা পার্কে প্রবেশ নিষেধ।’
বেইলি রোডের বেইলি ড্যাম্প অফিসার্স কোয়ার্টারের বাসিন্দা সরকারি কর্মকর্তা তামান্না রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিদিন সন্ধ্যায় রমনা পার্কে হাঁটা এখন বন্ধ। গত চার দিন ধরে পার্ক কর্তৃপক্ষ সেখানে সাময়িক যে একটা ব্যবস্থা ছিল তাও বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সন্ধ্যায় বাসার নিচে ওয়াকওয়েতে হাঁটাহাঁটি করছি।”
ঘরে ব্যায়াম করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আপলোড করেছেন তারিফ মাহমুদ । গত তিন দিনে যোগব্যায়ামের নানা আসনের কয়েকটি ভিডিও দিয়েছেন তিনি।
তারিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখন ঘরবন্দি। সেজন্য ঘরেই যোগব্যায়াম করছি। আমি আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ডদেরও বলছি, আসুন ভিডিও অন করে একসাথে করুন- শরীর সুস্থ থাকবে, মনও ভালো থাকবে।”
“দেখবেন, ব্যায়ামে উপকারিতা আছে। মানুষকে শান্তি, আনন্দ ও সুখ দেয়।”
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা বলেন, “সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকা যায় না। কিছুক্ষণ পায়চারি করি রুমের ভেতরে। আগে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় রমনা পার্কে হাঁটতাম। এটা এখন বন্ধ। ফ্রি হ্যান্ড কিছু এক্সারসাইজ আছে সেগুলো দিনে করি। এটাই দিনের রুটিন।”
তিনি বলেন, “ঘরবন্দি বলুন অথবা হোম কোয়ারেন্টিন বলুন, এ সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, আমি খাচ্ছি, আমার পরিবার। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়ে, তেমনি ফিট থাকবেন আপনি।”
“কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে এভাবেই আমাদের শিক্ষার্থীরা যুদ্ধ করছে- এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে। এই কঠিন সময়ে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।”