করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে দ্বিতীয় মৃত্যু, আক্রান্ত আরও ৪

বাংলাদেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত আরও একজন মারা গেছেন; আক্রান্ত হয়েছেন আরও চারজন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2020, 08:35 AM
Updated : 21 March 2020, 02:03 PM

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সত্তরোর্ধ্ব এই ব্যক্তি বিদেশ ফেরত স্বজনের মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

এনিয়ে নভেল করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দুজনে দাঁড়াল। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৪।

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে তিনজন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

তার ১০ দিন পর ১৮ মার্চ সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মেয়ের মাধ্যমে তার দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল। সেটাই ছিল বাংলাদেশে প্রথম মৃত্যু।

এরপর কয়েক দফায় শুক্রবার নাগাদ দেশে মোট ২০ জন কভিড-১৯ রোগী ধরা পড়ে। তারা কেউ বিদেশ ফেরত, কেউ তাদের স্বজন।

শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কভিড-১৯ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে নতুন মৃত্যুর খবর জানান, এক্ষেত্রেও বিদেশ ফেরতের মাধ্যমেই ঘটেছে সংক্রমণ।

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, “ওই লোকের বয়স সত্তরের বেশি। বিদেশে থাকে এমন স্বজনের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি শারীরিক নানা জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন।”

তার মৃত্যু হয়েছে ঢাকার বেসরকারি একটি হাসপাতালে। ওই হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালটির একজন পরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ সম্পর্কে আমরা কোনোকিছু বলতে পারব না। আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।”

ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার বাড়ির সবাইকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের নিজ দায়িত্বে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা বর্তমান কোয়ারেন্টিনে আছে।”

ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে মধ্যে তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকি ১৯ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকাতে শনাক্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসেছেন, এমন সবাইকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বিদেশ ফেরত সবাইকে হোমে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এই মুহূর্তে ৫০ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন। আর বিদেশফেরতদের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার ২৬৪ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। 

তিনি বলেন, মার্চের ১ তারিখের পর বিদেশফেরতদের তালিকা তথ্য বিমানবন্দর থেকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে। যারা পালিয়ে আছেন তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“সে তালিকা সারা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, আমাদের কাছে তথ্য দেন নাই, আত্মগোপন করেছেন, তাদেরকে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিনে নেওয়ার জন্য।”

দেড় শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ রোগকে ইতোমধ্যে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এতে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজারে পৌঁছেছে, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে আড়াই লাখ।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে জনসমাগমের মতো সব অনুষ্ঠান আয়োজনে মানা করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র, প্রেক্ষাগৃহ।

করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে যোগাযোগের জন্য হটলাইন (৩৩৩, ১৬২৬৩) চালু করেছে আইইডিসিআর। তাতে ফোন করলে বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবেন আইইডিসিআরের কর্মীরা।

কেউ চাইলে iedcrcovid19@gmail.com ঠিকানায় ই-মেইল করে নিজের বক্তব্য জানাতে পারবেন। এছাড়া ফেইসবুক গ্রুপ Iedcr,COVID-19 Control Room এর ইনবক্সে সমস্যার কথা বলতে পারবেন।

প্রতিরোধে করণীয়

করোনা ভাইরাস নিয়ে ভীত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেওয়া কিছু পরামর্শ মেনে চলতে সবাইকে পরামর্শ দিয়েছে সরকার।

>> নিয়মিত জীবণুনাশক বা সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া উচিত।

>> কাশি বা হাঁচি দিচ্ছেন এমন ব্যক্তি থেকে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন।

>> হাত না ধুয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

>> হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা হাতের কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে।

>> যেখানে সেখানে থুথু নিক্ষেপ করা যাবে না।

>> রান্না করার আগে ভালো করে খাবার ধুয়ে নিতে হবে।

>> যে কোনো খাবার ভালো করে সিদ্ধ করে রান্না করতে হবে।

>> অসুস্থ ব্যক্তি বা প্রাণীর সংস্পর্শে আসা যাবে না।

>> কাপড় একবার ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন।

>> বাড়ি এবং কর্মক্ষেত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

>> বাইরে ব্যবহৃত জুতা ঘরে ব্যবহার করা যাবে না। খালি পায়ে হাঁটা যাবে না।

>> পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলানো বা আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

>> জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। অন্যের সংস্পর্শ  থেকে দূরে থাকতে হবে।

>> স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুসরণ করে নিরাপদ থাকাই উত্তম পন্থা।

>> অসুস্থ বোধ করলে বাড়িতে অবস্থান করা উত্তম।

>> জনাকীর্ণ স্থানে সতর্ক থেকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

>> শিশু, বৃদ্ধ ও ক্রণিক রোগীদের অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে।

>> নিজেকে নিরাপদ রাখতে বিদেশ ভ্রমণ না করাই ভালো।