রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি জেনে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন।
Published : 08 Mar 2020, 12:22 AM
নিবন্ধিত দলগুলোর কাছে হালনাগাদ তথ্য চেয়ে চিঠি দিতে যাচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০-এর খ-এর খ(২) অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং ২০২০ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে।
২০০৮ সালে ইসির কাছে দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালুর এক যুগেও কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি দলগুলো।
প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীর রাজনীতিতে ক্ষমতায়নের দাবিটি জোরেশোরে উঠে। তখন প্রাসঙ্গিকভাবেই আসে দলগুলোর কমিটির পদ ৩৩ শতাংশ নারীকে দেওয়ার শর্তটি।
এবার নারী দিবসের আগে জানতে চাইলে ইসির উপ সচিব আব্দুল হালিম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাউন্সিল শেষ করেও দলগুলো নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে হালনাগাদ কোনো তথ্য দেয়নি। অনেক দল কাউন্সিল শেষ করেছে, অনেকে করবে। এ বছরটি পুরো সময় রয়েছে।
“এরই মধ্যে ইসির অনুমোদন সাপেক্ষে দলগুলোর কাছে নারী প্রতিনিধিত্বের সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে দলগুলোর কাছে চিঠি দেব।”
প্রধান দলগুলোই এখনও ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব পূরণ করতে পারেনি বলে গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছেন ইসি কর্মকর্তা হালিম।
তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে কমিশনের পরবর্তী করণীয় বিষয়ে ইসি সচিবালয় প্রয়োজনীয় তথ্যাদি উপস্থাপন করা হবে। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরই তা করতে হবে।
গত ডিসেম্বরেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সর্বশেষ কাউন্সিল করেছে। বিএনপি এখনও কাউন্সিল করেনি। জাতীয় পার্টিও কাউন্সিল করেছে।
আগের তুলনায় এবার আওয়ামী লীগে বেড়েছে নারী প্রতিনিধিত্ব। তিন বছরের মাথায় ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৬ শতাংশ হয়েছে আওয়ামী লীগের।
জাতীয় পার্টি ও বিএনপির কমিটিতে ২০ শতাংশের নিচে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে বলে কমিশনকে জানানো হয়েছিল।
বর্তমানে ইসির কাছে ৪০টি দল নিবন্ধিত রয়েছে।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ইতোমধ্যে বলেছেন, “দল কী করছে না করছে, তা তাদের বিষয়। আমাদের আরপিওতে ২০২০ সালের কথা বলা রয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে ব্যর্থ হলে তখন বিষয়টি দেখব।”
কিন্তু কোনো দলই এখনও সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব ৩৩ শতাংশ আনতে না পারায় আইন সংশোধনের আভাস দেন সিইসি।
তিনি বলেন, “এখনও সময় হয়নি; কোনো দল নির্ধারিত সময়ে পূরণে ব্যর্থ হলে তখন (আইন সংশোধনের বিষয়ে) বিবেচনা করব।”
নিবন্ধন বিধি প্রণয়নের সময়কার নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দলগুলো তাতে সাড়া দিচ্ছে, এখন ২০২০ সালে পূরণ করতে পারবে কি না, তা-ই দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যপূরণ করতে না পারলে নিবন্ধন বাতিলের মতো কোনো নির্দেশনাও আইনে বলা হয়নি। তবে আরপিও সংশোধন করে আবার সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।
২০০৮ সালে ভোটে অংশ নিতে ইসিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু হয়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতেঅন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দলগুলো নিবন্ধন নেওয়ার সময় এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৪০টি দলের মধ্যে ১০টি দল নারী নেতৃত্বের বিষয়ে বর্তমানে দলের কী অবস্থান, কত শতাংশ পূরণ করেছে তা জানিয়েছে। বাকি ৩০টি দল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বিষয়ে ইসিকে আশ্বস্ত করেছে।
গণফ্রন্ট ও সাংস্কুতিক মুক্তিজোট সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি রাখার কথা জানিয়েছিল বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।