নারী প্রতিনিধিত্ব: এক বছরের মধ্যে ৩৩% পূরণ হবে কী

নির্বাচনী আইন মানতে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সময় রয়েছে আর এক বছর।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2019, 04:29 AM
Updated : 8 Dec 2019, 04:29 AM

এক দশকেও না পারার মধ্যে বাকি এক বছরের মধ্যে দলগুলো এই শর্ত পূরণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। তবে তিন প্রধান দল বলছে, তারা এই শর্ত পূরণে কাজ করে যাচ্ছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০-এর খ-এর খ(২) অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং ২০২০ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার এক দশকেও যেসব দল অর্ধেক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে; এক বছরের মধ্যে শতভাগ লক্ষ্য অর্জন অনেকটা অসম্ভব। তবে তা বাস্তবায়নে দল ও কমিশনের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার ধারা ধরে রাখতে দলগুলোকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।

সব স্তরে ১৫%-২০% নারী প্রতিনিধিত্ব আনতে পেরেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো বড় দলগুলো, যাদের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন নারীরা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আশা করি, নির্ধারিত সময়ে টার্গেট পূরণ করতে পারব। আমাদের তৃণমূলের কমিটিগুলোতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী প্রতিনিধি রয়েছে। শুধু মহিলাদের নিয়ে আলাদা সংগঠনও রয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলে ইসির বিধি বিধান পালনে কাজ করে যাচ্ছি, সব মিলিয়ে লক্ষ্য অর্জন হবে।”

এক বছরের মধ্যে প্রতিশ্রুতি পূরণে ‘ব্যর্থ’ হলে আইন সংশোধনের প্রস্তাব থাকবে কি না, সে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

“সময় আসুক। আমরা তো আশা করছি, এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে,” উত্তর আসে হানিফের কাছ থেকে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সর্বশেষ ইসিকে জানানো হয়, দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৮১ জনের মধ্যে ১৫ জন নারী; শতকরা হারে তা ১৮ ভাগ।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা শ্রমিক লীগের কাউন্সিলের দৃশ্য; এই সংগঠনটি নারীদের নিয়েই গঠিত

দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতে নারী সদস্যের হার ১৫ শতাংশ। আওয়ামী লীগের তিনটি সহযোগী সংগঠন- বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগের শতভাগ সদস্য নারী।

বিএনপিও নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়িয়ে এক বছরের লক্ষ্যপূরণে কাজ করছে বলে জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সব স্তরে উল্লেখযোগ্য নারী প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এখন কমিশনের আইন অনুযায়ী নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালনের বিষয়টিও নজরে আছে আমাদের। সামনে কাউন্সিল হলে সবাই জানতে পারবেন। দলের পক্ষ থেকে সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিত্ব নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।”

বিএনপির পক্ষ থেকেও দলের সব স্তরের কমিটিতে ১৫ ভাগ নারী সদস্য রয়েছে বলে ইতোমধ্যে কমিশনকে জানানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তুলনায় ভালো অবস্থানে থাকা জাতীয় পার্টি ২০২০ সালের মধ্যে সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে আশাবাদী দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

নিবন্ধিত অন্য দলগুলোর নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাচ্ছি। অন্যদের তুলনায় আমাদের অবস্থানও ভালো।”

কমিশনকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের সব পর্যায়ের কমিটিতে ২০ শতাংশ নারী রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না হলে করণীয় নির্ধারণে পরবর্তীতে ইসি বসে সিদ্ধান্ত নেবে।

সেক্ষেত্রে কমিশন আনুষ্ঠানিক অগ্রগতি জানতে তথ্য চাইতে পারে কিংবা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দলগুলোর আবেদন পেলে তা যাচাই করার সুযোগ থাকবে। এবং আইন সংশোধন করতে হলে সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

নিবন্ধন বিধি প্রণয়নের সময়কার নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেছেন,  তৎকালীন কমিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দলগুলো তাতে সাড়া দিচ্ছে, এখন ২০২০ সালে পূরণ করতে পারবে কি না, তা-ই দেখার বিষয়।

তার মতে, নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যপূরণ করতে না পারলে নিবন্ধন বাতিলের মতো কোনো নির্দেশনাও আইনে বলা হয়নি। তবে আরপিও সংশোধন করে আবার সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।

২০০৮ সালে ভোটে অংশ নিতে ইসিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু হয়।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতেঅন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দলগুলো নিবন্ধন নেওয়ার সময় এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

প্রথমবার ৩৮টি দল নিবন্ধিত হলেও এক যুগে কয়েকটি বাতিল ও নতুন নিবন্ধন মিলিয়ে বর্তমানে ৪০টি দল নিবন্ধিত রয়েছে। নতুন দলগুলোর ক্ষেত্রে এ শর্ত সীমিত বা কবে নাগাদ বাধ্যতামূলক হবে বে বিষয়টি স্পষ্ট নেই।

জানতে চাইলে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইসির উপ সচিব আব্দুল হালিম খান বলেন, “আমরা সময়ে সময়ে দলগুলোর কাছে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাই, এর সঙ্গে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্বে অগ্রগতিও জানতে চেয়েছিলাম। সময় আছে আর এক বছর।

“এখন দলগুলো কাউন্সিলর করছে, কমিটি গঠনের কাজ করছে; তারাই বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। আমাদের পক্ষ থেকে এখনই আলাদা করে কোনো তাগিদপত্র দেওয়া হবে না। কমিশন থেকেও এখন কোনো নির্দেশনা নেই।”

২০২০ সালের সময়সীমা পার হলেই করণীয় নিয়ে কমিশন পদক্ষেপ নেবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

সর্বশেষ গেল বছর ৪০টি দলের মধ্যে ১০টি দল নারী নেতৃত্বের বিষয়ে বর্তমানে দলের কী অবস্থান, কত শতাংশ পূরণ করেছে তা জানিয়েছে। বাকি ৩০টি দল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বিষয়ে ইসিকে আশ্বস্ত করেছে। শুধু গণফ্রন্টসব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি রাখার কথা জানিয়েছিল।