ক্ষমা চাইতে মন্ত্রী মোজাম্মেলকে উকিল নোটিস

রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় দেশ-জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2019, 11:59 AM
Updated : 19 Dec 2019, 11:59 AM

মন্ত্রী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা না চাইলে ‘প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার’ হুমকি দেওয়া হয়েছে ওই নোটিসে। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম জুলফিকার আলী জুনু বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার ডাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও তার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ওই নোটিস পাঠান।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,“বিতর্কিত এই তালিকা প্রকাশ করে তিনি (মোজাম্মেল হক) মুক্তিযোদ্ধাদের চরম অপমান করেছেন। তাদের অবদানকে পদদলিত করেছেন। একই সঙ্গে তাদের সামাজিক-পারিবারিক মানসম্মানকে বিপর্যস্ত করেছেন।’

ওই তালিকা প্রকাশ করার মাধ্যমে মন্ত্রী সংবিধান লঙ্ঘনের পাশাপাশি শপথও ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ করেন এই আইনজীবী।

নোটিসে বলা হয়েছে, “বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানতে পারি যে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তালিকায় নানা অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। এতে এমন সব ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, লড়াই করেছেন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন।”

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বরাত দিয়ে নোটিসে বলা হয়েছে, রাজাকারের তালিকায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম থাকলেও চিহ্নিত রাজাকারদের নাম বাদ পড়েছে।

“প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম থাকায় দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধার হৃদয়ে আঘাত করা হয়েছে। তাদের অসম্মান করা হয়েছে; যা দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাজনক।”

বিজয় দিবসের আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ ওই তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। কিন্তু ওই তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও একাত্তরের আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকজনের নাম আসায় তীব্র সমালোচনা হয়।

এই পরিস্থিতিতে বুধবার সংশোধনের জন্য ওই তালিকা স্থগিত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকেও তা সরিয়ে নেওয়া হয়।

ওই ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ওই তালিকা তার মন্ত্রণালয় করেনি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়েছিল, সেই তালিকা তারা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে বা যাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এমন ৯৯৬ জনের একটি তালিকাও তারা দিয়েছিলেন, যা রাজাকারের তালিকায় আসার কথা ছিল না।

এভাবে ভুল রেখে তালিকা প্রকাশকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ‘কাণ্ডজ্ঞানহী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে আইনজীবী জুনু তার নোটিসে বলেছেন, “এর মাধ্যমে দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে পদদলিত করা হয়েছে।”

শুধু তাই না, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার’ মত অপরাধ করেছে বলেও মনে করেন এই আইনজীবী।

“এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে নোটিস পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশ জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় সংবিধান লঙ্ঘন করে মুক্তিযোদ্ধাদের চরিত্র হননের জন্য দেশের প্রচলিত আইনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”