মশা মারতে গিয়ে ‘অসহযোগিতা পেয়ে’ হুঁশিয়ারি মেয়র আতিকের

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এইডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে নগরবাসীর সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2019, 11:58 AM
Updated : 21 August 2019, 02:48 PM

বুধবার এক অনুষ্ঠানে এই অভিযোগ তুলে তিনি নগরবাসীকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, এরপর অসহযোগিতা পেলে সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বাধার আইন প্রয়োগ করা হবে।

মেয়র আতিক অসহযোগিতার ধরন বর্ণনা করে বলেন, “কোনো কোনো বাড়িতে গিয়ে ৪৫ মিনিট আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অভিযান পরিচালনায় যখন গিয়েছি, লিফটের মেশিন খুলে রাখা হয়েছে। ছাদের চাবি নেই বলা হয়েছে।”

“তাই আমরা অভিযানে গিয়ে সরকারি কর্মচারীদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ১৮৬০ এর দণ্ডবিধির ১৮৩ থেকে ১৮৭, ২৬৯ থেকে ২৭০ এর ধারা প্রয়োগ করব, “ বলেন তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিক একদিন আগেই ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশার লার্ভা নিধনে এক বাড়িতে অভিযানের সময় পা মচকে ফেলেন।

নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়ে তিনি মঙ্গলবার বলেছিলেন, “দেখা যাচ্ছে, বাড়ির সামনেরটা ছিমছাম। কিন্তু পেছনে অসুন্দর….গর্ত। এমনই এক গর্তে পড়ে আমার পা মচকে গিয়েছে।”

এবার ডেঙ্গু জ্বর ব্যাপক আকারে দেখা দেওয়ার পর সিটি করপোরশনের বিরুদ্ধেই ওঠে অভিযোগের আঙুল।

এরপর মশা নিধনে ওষুধ বদলানোর পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশার লার্ভা নিধনে অভিযান চালাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই।

গুলশানের স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, "চিঠি দিয়েছি সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে, স্ব স্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার করতে হবে। কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নন।”

মশা নিধনে গত মঙ্গলবার থেকে ঢাকার উত্তরে শুরু হয় ‘চিরুনি অভিযান’, যা আগামী রোববার থেকে ৩৬টি ওয়ার্ডে জোরদার করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানান মেয়র আতিক।

তিনি বলেন, “আমাদের চিরুনি অভিযান চলতেই থাকবে। এই অভিযানে আমরা একেবারেই উইদাউট ইনফরমেশন চলে যাব।”

বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশা নিধন অভিযান চালাতে গিয়ে পা মচকানোর পর মঙ্গলবার ক্র্যাচে ভর করে চলতে দেখা যায় মেয়র আতিকুল ইসলামকে

মশা নিধন অভিযানে লোকবল সঙ্কট ও প্রযুক্তির অভাবের কথা বরাবরই বলে আসছিলেন মেয়র আতিক। এবার স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৬০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে ফগিং মেশিন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর উদ্দেশে আতিক বলেন, “এই লোকবল এক-দুই মাসের জন্য দিলে চলবে না। মশক নিধন কার্যক্রম চলবে বছরের ৩৬৫ দিন। তাই এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আমাদের মধ্যে থাকতে হবে।”

মন্ত্রী তাজুল প্রতিশ্রুতি দেন, এই কর্মীদের সিটি করপোরেশনেই নিয়োজিত রাখা হবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া জানান, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলবে ডিএনসিসির মশা নিধন অভিযান।

নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ব্লককে ভাগ করা হয়েছে  আরও ১০টি সাব ব্লকে। প্রতিটি সাব ব্লকে ৮-১০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি একজন স্প্রেম্যান দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ব্লকে ২ জন করে সাব স্টেশন প্রকৌশলী এবং দুজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে ডিএনসিসি।

মশা নিধনের ওষুধ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিও মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের ছিটানো ওষুধের অকার্যকারিতার কথা বলেছেন।

এ নিয়ে সাংবাদিকরা মন্ত্রী তাজুলকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশন যখন আমাদের জানিয়েছে, ওষুধ সাব স্ট্যান্ডার্ড, আমরা সে ওষুধ ফেরত দিয়েছি। এইডিস মশা তো আর ড্রেনে ও আবর্জনার জন্মায় না।  হয়ত সে কারণে আমাদের ইনসেকটিসাইড সেভাবে কাজ করেনি। তাছাড়া আমাদের মশার ইমিউন গ্রোথও দেখতে হবে। হয়ত আমাদের আনা ওষুধে মশা মরেনি।”

কদিন আগে চীন ও ভারত থেকে দুই সিটি করপোরেশনে মশা মারার নতুন ওষুধ নিয়ে এসেছে।

মন্ত্রীর দাবি, “এই নতুন ওষুধের আমরা পরীক্ষায় প্রমাণ পেয়েছি, মশা মরছে।”

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী মশার ওষুধ ছিটানোর কথাও বলেন তাজুল ইসলাম।

“আমরা এমন ইনসেকটিসাইড ছিটাব না, যাতে মানুষ মরে যায়। পরিবেশের কথা বিবেচনা করে, আগামীতে যেন ইনসেকটিসাইড ছিটাতে না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখব।”

ডিএনসিসির এই সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরা যোগ দেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল তাদের জানান, মশা নিধনে ‘ভালো কাজ’ দেখাতে পারলে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেবে তার মন্ত্রণালয়।