নবম ওয়েজ বোর্ড: গেজেট প্রকাশের ‘বাধা কাটলো’

সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশের ওপর হাই কোর্টের দেওয়া স্থিতাবস্থার আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2019, 04:13 AM
Updated : 20 August 2019, 07:58 AM

হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।

সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশের ফলে ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা ও গেজেট প্রকাশ করতে কোনো বাধা থাকছে না বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও অমিত তালুকদার।

আর আর রিট আবেদনকারী নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) সভাপতি মতিউর রহমানের পক্ষে ছিলেন এ এফ হাসান আরিফ। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী।

আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের আদেশটি সাংবাদিকদের জন্য সুখবর বলা যেতে পারে। আমরা (নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন) চেয়েছিলাম, আমাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে যেন বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়। আইনেই আছে। আমরা এই স্পেসটুকু চেয়েছিলাম।”

তিনি বলেন, হাই কোর্টের আদেশটি আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত হওয়ায় সরকার চাইলে এখন ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশ করতে পারে। তবে হাই কোর্ট যে রুল এর আগে দিয়েছিল তার ওপর শুনানি হবে।  

“অর্থাৎ, ওয়েজ বোর্ডের সিদ্ধান্ত যা তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে, তথ্য মন্ত্রণালয় এটাকে চূড়ান্ত করার জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছিল সে পদক্ষেপ নিতে পারবে। সরকার এখন গেজেটে পাবলিশ করতে পারবে এবং গেজেটে পাবলিশ হলে মজুরি বাস্তবায়নের জন্য এটা আইন হিসেবে গণ্য হবে।”

গত ৬ অগাস্ট সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে নবম ওয়েজবোর্ডের সুপারিশ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশে দুই মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে হাই কোর্ট।

নবম ওয়েজ বোর্ড চূড়ান্ত করার বিষয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ওই রিট আবেদন করেন নোয়াব সভাপতি মতিউর রহমান। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি মোহাম্মদ অলীর হাই কোর্ট বেঞ্চ স্থিতাবস্থার আদেশ দিলে গেজেট প্রকাশ আটকে যায়।

হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গত বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গেলে চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

সে অনুযায়ী সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হয়। মঙ্গলবার আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে দিল।

গত ৬ আগস্ট স্থিতাবস্থা জারির পাশাপাশি একটি রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট। শ্রম আইনের ১২৮ বিধি অনুযায়ী ‘অংশীজনদের আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ না দিয়ে একতরফাভাবে’ নবম ওয়েজবোর্ড চূড়ান্তকরণ এবং গেজেট জরির সুপারিশ করে তা সরকারের কছে পাঠানো কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় সেই রুলে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য সচিব, শ্রম সচিব এবং নবম ওয়েজ বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

স্থিতাবস্থার আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত হলেও হাই কোর্টের জারি করা ওই রুল এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

রুল শুনানিতে আপিল বিভাগের আদেশের কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে হাসান আরিফ বলেন, “রুল শুনানি হবে মেরিটের উপরে। আর রুল হেয়ারিংয়ে এর প্রভাব পড়বে কি পড়বে না- সেটা আদালতের ব্যপার, আদালত এটাকে কীভাবে নেবে।”

মতিউর রহমানের রিট আবেদনে বলা হয়, শ্রমবিধির ১২৮ বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ‘আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ না দিয়ে’ নবম ওয়েজ বোর্ডের চেয়ারম্যান একতরফাভাবে নবম ওয়েজবোর্ড চূড়ান্ত করেছেন; যা ‘কতৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি’।

“এজন্য নবম ওয়েজবোর্ড চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াটি একতরফা, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতমূলক। সুতরাং চূড়ান্তভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়া গেজেট প্রকাশের অনুমতি দেওয়া যায় না।

“তাছাড়া ওয়েজবোর্ড সংক্রান্ত বিচারাধীন একটি রিট মামলায় জবাব না দিয়ে কমিটি মজুরি কাঠামোর সুপারিশ একতরফাভাবে চূড়ান্ত করে দিয়েছে যা আইন সমর্থন করে না। সুতরাং এটি আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়াই করা হয়ছে বলে ঘোষণা করা উচিত।”

সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য গঠিত নবম মজুরি কাঠামো (ওয়েজ বোর্ড) কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত বছরের ২ জুলাই রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট।

তথ্য সচিব, শ্রম সচিব ও ওয়েজ বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিমকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল, যা এখনও বিচারাধীন।

২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছিল সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। এ দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন।

দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে থাকার পর আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে গতবছর ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়।

পরে নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মতিউর রহমান গত বছরের মে মাসে এ রিট আবেদন করেন।

এরপর গতবছর ১১ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে সরকার, যা ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়।

বিচারপতি নিজামুল হক গত ৪ নভেম্বর তখনকার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।

ওই প্রতিবেদন গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে মন্ত্রিসভা তা পরীক্ষা করে সুপারিশ দিতে ওই সময়কর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা কমিটি করে দেয়।

নতুন সরকার গঠনের পর গত ২১ জানুয়ারির মন্ত্রিসভা বৈঠকে আগের মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের মন্ত্রিসভা কমিটি করে সরকার।

গত ২৫ জুলাই ওই কমিটির এক বৈঠকের পর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নবম ওয়েজবার্ডের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই সুপারিশ এখন মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। মন্ত্রিসভার সম্মতি পেলেই তা গেজেড আকারে প্রকাশ করা হবে।

তবে মন্ত্রিসভা কমিটি গড়ে কত শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে- সে তথ্য সেদিন প্রকাশ করেননি ওবায়দুল কাদের।