এইডিস মশা সবচেয়ে বেশি টার্মিনাল, হাসপাতাল, বস্তিতে

রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল, কমলাপুরের বিআরটিসি বাস ডিপো, কমলাপুর রেলওয়ে বস্তি, শাজাহানপুর বস্তি ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রার চেয়েও চার গুণ বেশি। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2019, 06:06 PM
Updated : 11 August 2019, 06:07 PM

আর বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা পরিত্যক্ত টায়ার এ মশার সবচেয়ে বড় প্রজননস্থল হয়ে উঠেছে বলে উঠে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জরিপে।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এইডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এ বছর বর্ষা মৌসুমে পরিচালিত নিয়মিত জরিপের অতিরিক্ত হিসেবে ৩১ জুলাই থেকে ৪ অগাস্ট সময়ে ঢাকার ১৪টি এলাকায় এই জরিপ চালানো হয়। সেই জরিপের ফলাফল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

নিয়মিত জরিপগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাধারণত বহুতল ভবন, আবাসিক এলাকা, ফাঁকা জায়গা ও নির্মাণাধীন ভবনে মশার ঘনত্ব জানার চেষ্টা করে।

কিন্তু জনবহুল এলাকায় মশার বিস্তারের ধরন বুঝতে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কীটতত্ত্ববিদদের চারটি দল পাঁচ দিন ধরে ১৪টি এলাকায় এই চরিপ চালায়।

মূলত বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, বস্তি এলাকা, মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকা, পুলিশ লাইনস ও হাসপাতাল এলাকাকে এই জরিপের জন্য বেছে নেওয়া হয়।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ওই ১৪টি স্থানের মধ্যে ১২টিতেই ব্রুটো ইনডেক্স ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রা বা ২০ এর বেশি।

রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মশার প্রজনন উৎস হিসাব করে এ জরিপ চালানো হয়। প্রতি একশ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এইডিস মশার লার্ভা বা পিউপা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি’ বলা যায়।

জরিপে দেখা যায় মহাখালী বাস টার্মিনাল, কমলাপুরের বিআরটিসি বাস ডিটো, কমলাপুর রেলওয়ে বস্তি, শাজাহানপুর বস্তি ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৮০ বা তার বেশি। 

এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল, মিরপুর ১২ নম্বরে বিআরটিসির বাস ডিপোতে ব্রুটো ইনডেক্স ৬০ থেকে ৮০ এর মধ্যে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, মহাখালীর কড়াইল বস্তি আর মিরপুর ১২ নম্বরে মেট্রো রেল প্রকল্প এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৪০ থেকে ৬০ এর মধ্যে।

ঢাকার বাস টার্মিনাল ও ডিপোগুলোতে ঘুরে যত্রতত্র পরিত্যক্ত টায়ার এবং পানিভর্তি প্লাস্টিকের আধার পড়ে থাকতে দেখেছে, যেগুলোতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে ব্যাপক হারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলছেন, এডিস মশা গড়ে তিনশ মিটারের বেশি উড়তে পারে না। তবে কোনো মাধ্যম ব্যবহার করে তারা বহুদূরেও পৌঁছে যেতে পারে। তেলাপোকা এভাবেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে।

“বাস ডিপোতে রাখা একটা বাস বা এয়ারপোর্টে রাখা একটা এয়ারক্রাফট বা অন্য যে কোনো বাহনের দরজা খুলল, মশাটা সেখান গিয়ে আশ্রয় নিল। যানবাহনে রাখা একটা বালতিতে মশা ডিম পাড়ল, সেই বালতিটা চলে গেল শহরের বাইরে। সেখানে গিয়ে পানি পেয়ে ডিম ফুটে মশা জন্ম নিল। এটাকে বলা হয় ডিসপারসন অব অ্যানিমেল।”

আর এ কারণে কোরবানির ঈদের সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি এবং যানবাহনে করে চলে যাওয়া এইডিস মশার কারণে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আরও বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে আসছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কীটতত্ত্ববিদ ও সিভিল সার্জনরা ঢাকা ছাড়ার আগে যানবাহনগুলোকে মশামুক্ত করার ওপর জোর দিচ্ছিলেন।

সে অনুযায়ী সরকারের তরফ থেকে ঈদযাত্রার যানবাহন ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার আগে মশা মরার ওষুধ স্প্রে করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনের ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ট্রেন বা বাসে সেই নির্দেশনা ঠিকঠাক মানতে দেখা যায়নি।

চলতি বছর সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে অগাস্টের প্রথম দশ দিনেই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ৭১৭ জন।

সরকার চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করলেও বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১১৫ জনের মৃত্যুর তথ্য পেযেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে নতুন রোগী ভর্তির প্রবণতা কিছুটা কমলেও ঢাকার বাইরে তা বাড়ছে। অবশ্য এখনও তা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “লোকজন ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে যাওয়ায় ঢাকায় রোগী ভর্তির সংখ্যা কমছে। আর সারাদেশে তুলনামূলকভাবে বেড়েছে, তবে তা আশঙ্কাজনক বলা যাবে না।...

“ঢাকার বাইরে যেহেতু ডেঙ্গু মশা কম সে কারণে আক্রান্তদের কাছ থেকে ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা কম। এ কারণে আমরা আশা করছি, সেপ্টেম্বর নাগাদ রোগীর সংখ্যা অনেক কমে যাবে।”

ঢাকার বাইরে আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সবগুলো হাসপাতালের চিকিৎসককের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়া আছে। আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হবে না।”