ঈদের আগে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার বিভিন্ন কোম্পানির বাসের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা যায়, তাদের অনেকে নির্দেশনার কথাই জানেন না।
কমলাপুর থেকে দেশের নানা প্রান্তে ছেড়ে যাওয়া সব ট্রেনেও ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি।
এবার ঢাকায় ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোরবানির ঈদের সময় প্রতিটি বাস ছাড়ার আগে মশানাশক অ্যারোসল স্প্রে করার জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বাসমালিকদের চিঠি দেওয়ার কথা সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দুদিন পর বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকার বাস টার্মিনাল গাবতলী ঘুরে রওনা হওয়া বাসগুলোতে মশা মারার ওষুধ ছিটানো দেখা যায়নি।
যশোরগামী এ কে ট্রাভেলসের একটি বাসের চালক লোকমান শেখ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাতে একবার স্প্রে করে দিই, এটা দিয়েই সারাদিন চলি। এই নিয়মে তো অনেক দিন ধরেই চলছি। আলাদাভাবে সকালে মশার ওষুধ দেওয়ার কথা তো আমাদের কেউ বলেনি।”
এ কে ট্রাভেলসের কাউন্টারে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ‘কাউন্টারম্যান’ মো. জেলাল শেখ বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাস চালু হওয়ার পর আমরা অ্যারোসল ব্যবহার করি। এটা আমাদের নিয়ম। তবে বাস ছাড়ার আগে মশা মারার ওষুধ দিতে হবে, এমন কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের বলেনি।”
নির্দেশনার কথা জানা নেই বলে জানান ঢাকা থেকে রাজবাড়ি পথে ছেড়ে যাওয়া রাবেয়া পরিবহনের চালকের সহকারী ইলিয়াস হোসেনও।
তিনি বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদেরকে কেউ কোনো ওষুধ দেয় নাই। তাহলে আমরা কীভাবে দেব? আর গাড়িতে ওষুধ দিতে হবে, এমন কোনো কথাও আমি শুনি নাই।”
দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত গাবতলী ছেড়ে যাওয়া সেবা গ্রীন লাইন পরিবহনের কয়েকটি বাস গোপালগঞ্জের পথে ছেড়ে গেলেও সেগুলোতে মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি।
একটি বাসের চালকের সহকারী ওমর ফারুক বলেন, “আমি রাতে গাড়িতেই ঘুমাই। তখন দরজা-জানালা বন্ধ করে স্প্রে করি। এর পর আর কোনো মশা থাকে না। সকালে ওষুধ দেওয়ার কোনো দরকার হয় না।”
বিকাল ৪টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত কমালাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া আটটি ট্রেনের মাত্র একটিতে অ্যারোসল স্প্রে করার খবর পাওয়া যায়।
স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পৌনে ৫টায় দাঁড়ানো জামালপুরগামী যমুনা এক্সপ্রেসের যাত্রী মো. জুবাইদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি ট্রেনে উঠেছি। এখানে মশার ওষুধ দিতে কেউ আসেনি।”
ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) খলিলুর রহমান বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকে কেউ স্প্রে করার কথা বলেনি। এমনকি স্প্রে করতে কেউ আসেনি।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী তিতাস কমিউটার ট্রেনে বসে থাকা যাত্রী মো. তারেক আহমেদ বলেন, “কেউ স্প্রে করে নি। করলে তো আপনিও গন্ধ পেতেন।”
সাড়ে ৫টার দিকে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে ট্রেনটির পরিচালক মো. মাসুদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “কই, মশা মারার কোনো ওষুধ তো কেউ ছিটায়নি।”
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসের যাত্রী শহিদউল্লার বলেন, “ট্রেনে এখনও কেউ স্প্রে করেন নি। ছাড়ার আগে করবে কি না, জানি না।”
এই সময়ের মধ্যে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী বনলতা এক্সপ্রেসে বগির ভেতর মশার ওষুধ স্প্রে করার খবর পাওয়া গেছে।
নির্দেশনা থাকার পরও কেন ট্রেনে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না- জানতে চাইলে কমলাপুর স্টেশন মাস্টার শাহ বাবু বলেন, এই বিষয়টি তারও জানা নেই।