ট্রেন আসছে দেরিতে, তাই ‘স্প্রের সুযোগ হচ্ছে না’

বরাবরের মতো এবার কোরবানির ঈদেও সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলো; যাত্রীদের তাড়ার কারণে মশার ওষুধ ছিটানোর সুযোগ হচ্ছে না বলে রেল কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।

তাবারুল হক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2019, 12:11 PM
Updated : 8 August 2019, 12:11 PM

এবার ঈদযাত্রার মধ্যে ডেঙ্গু নতুন উপসর্গ হয়ে  দেখা দেওয়ায় ট্রেনগুলোতে মশা মারার ওষুধ ছিটানোর নির্দেশনা ছিল সরকারের।

বুধবার ঈদযাত্রা শুরুর দিন ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে অধিকাংশ ট্রেনকে ওষুধ না ছিটিয়েই রওনা হয়ে দেখা গিয়েছিল; বৃহস্পতিবারও চিত্র ছিল একই।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কমলাপুরের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রথমে বলেন, স্টেশনে যাত্রীদের নামিয়ে ‘ওয়াশ ফিড’ থেকে ট্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পর মশার ওষুধ ‘স্প্রে’ করে তবেই যাত্রী তোলা হচ্ছে।

কিন্তু অধিকাংশ ট্রেনের যাত্রীরা ওষুধ না ছিটানোর অভিযোগ করেছেন জানানো হলে তিনি বলেন, “যেসব ট্রেন আসতে বেশি দেরি করেছে, সেগুলো গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মশন নিধন স্প্রে করা হবে।”

উত্তরাঞ্চলগামী একতা এক্সপ্রেসের এটেনডেন্ট মো. শাহজাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রেন ঢাকায় দেরিতে আসায় ভিড় এড়াতে কিছু যাত্রী এই ট্রেন ঢাকা ঢোকার সময় বিমানবন্দর স্টেশন থেকেই উঠে পড়ে।

“এরপর কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার পর অপেক্ষমান যাত্রীরা সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ে। তখন ট্রেন আর ওয়াশ ফিডে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার সুযোগ থাকে না।”

বৃহস্পতিবার রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ ট্রেন নির্ধারিত সময়ের পরে কমলাপুরে পৌঁছে। ফলে ছেড়েও যায় নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা দেরিতে।

এসব ট্রেন কমলাপুরের প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা ট্রেনে থাকা যাত্রীদের নামার আগেই হুড়ুমুড়িয়ে উঠে পড়ছেন।

খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়া কথা থাকলেও তা ছাড়ে সকাল সোয়া ৮টায়। রাজশাহীগামী ধূমকেতু সকাল ৬টার পরিবর্তে ছেড়ে যায় সকাল সোয়া ৯টায়। চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, এটি তিন ঘণ্টার বেশি দেরি করে।

রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এটি দুপুর সোয়া ১২টার পর ছেড়ে যায়। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময় সকাল ১০টার বদলে ১২টা ৫০ মিনিটে কমলাপুর ছাড়ে।

ট্রেনগুলোর দেরির কারণ জানতে চাইলে স্টেশন ব্যবস্থাপক আমিনুল বলেন,  “ঈদে যাত্রীদের চাপ বেশি, যে কারণে প্রতিটি স্টেশনে যাত্রী উঠা-নামায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে ৫-১০ মিনিট বেশি সময় লাগে। এ কারণে এসব ট্রেন স্টেশনে পৌঁছাচ্ছে দেরিতে, ফলে ছাড়তেও দেরি হচ্ছে।”

তবে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলসহ অন্যান্য রুটের ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।

ঈদের আগের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড়।

ট্রেন দেরিতে ছাড়ায় ভোগান্তির কথা জানানোর পাশাপাশি মশার ওষুধ স্প্রে না করার অভিযোগও করেন যাত্রীরা।

রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী ঢাকার একটি কলেজের শিক্ষার্থী মো. রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার ঘণ্টা ধরে স্টেশনে অপেক্ষা করার পর ট্রেন পেলাম। এখন পৌঁছতেও তো দেরি করবে। এই ট্রেন আজীবনের লেইট ট্রেন।”

রংপুর থেকে ট্রেনটি কমলাপুর পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠতে থাকে। এরপর ট্রেন প্ল্যাটফর্মে রেখেই প্রয়োজনীয় পানি ও জ্বালানি তেল নেওয়া হয়।

মশা নিধনে কোনো স্প্রে করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে রায়হান বলেন, “আমি তো এমন আলামত দেখছি না। তবে মশাও তেমন চোখে পড়েনি।”

এই ট্রেনের এটেনডেন্ট আতিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রেনের এসি বগিতে অ্যারোসল ও এয়ার ফ্রেশনার দেওয়া হয়। ননএসি বগিতে কোনো স্প্রে করা হয় না।”

কমলাপুরে এই চিত্র বুধবারের; বৃহস্পতিবারও ছিল এমন ভিড়। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে একতা এক্সপ্রেস স্টেশনে পৌঁছানোর পর যাত্রীরা উঠে পড়ে। ফলে ট্রেনটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়নি। মশার ওষুধ ছিটাতেও দেখা যায়নি।

এই ট্রেনের যাত্রী মতিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রেন লেইট। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে স্টেশনের ঘোরাফেরা করেছিলাম। গাড়ি স্টেশনে যেহেতু এসেছে, তাই  উঠে পড়লাম।”

ট্রেনে মশা নিধনে কোনো ওষুধ ছিটানো হচ্ছে কি হচ্ছে না, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই মতিউরের।

এদিকে দুপুরে রেল পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. মহসিন হোসেন কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শনে আসেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ঈদে ঘরমুখো মানুষ যেন স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পারেন, সেজন্য পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো যাত্রী যাতে ট্রেনের ছাদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে না ওঠেন, সেই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সজাগ আছেন।”