ওসি মোয়াজ্জেম কোথায়?

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি ইন্টারনেটে ছড়ানোর ঘটনায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তারে আদালতের জারি করা পরোয়ানা দুই দিনেও ফেনীতে পৌঁছেনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2019, 11:36 AM
Updated : 29 May 2019, 12:51 PM

পরিদর্শক মোয়াজ্জেম হোসেন এখন কোথায় আছেন- সে বিষয়েও স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা।

এরই মধ্যে বুধবার তিনি আগাম জামিন চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি আবেদন করেছেন। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু এখনও শুনানির জন্য আসেনি, সেহেতু তিনি আদালতেও হাজির হননি।

গত মার্চ মাসে নুসরাত তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করার পর তার তদন্তে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম সোনাগাজী থানায় ডেকে নিয়ে ওই মাদ্রাসাছাত্রীর জবানবন্দি নিয়েছিলেন।

তার কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা নিয়ে সারাদেশে আলোচনার মধ্যে ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর পর গত ১৫ এপ্রিল ওই ভিডিও ছড়ানোর জন্য ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন ওই অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।

এর ধারাবাহিকতায় পিবিআই যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, সেখানে ওসি মোয়াজ্জেমের নিজের মোবাইল ফোনে জবানবন্দি রেকর্ড করার এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।

পিবিআইয়ের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন সোমবার মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

এদিকে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পর ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রথমে সোনাগাজী থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পুলিশ বাহিনী থেকে।

মামলার বাদী ব্যারিস্টার সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এজাহারে আসামির ঠিকানা হিসেবে সোনাগাজী থানার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

“নিয়ম অনুযায়ী ফেনীর পুলিশ সুপারের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যাওয়ার কথা। সোমবারই আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ফেনীতে পাঠানো হয়েছে। এর স্মারক নম্বর- ৬৬৯/১৯।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনীর পুলিশ সুপার কাজী মো. মনিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠান হয়েছে। শুনেছি তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হয়েছে। তবে বুধবার দুপুর পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আসেনি।”

আর রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির স্টাফ অফিসার এএসপি শরিফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর  ডটকমকে জানান, ফেনী থেকে প্রত্যাহার করার পর পরিদর্শক মোয়াজ্জেম নিয়ম অনুযায়ী রংপুরে যোগদান করেন।

“যোগদানের পর নুসরাতের ঘটনার সাক্ষ্য দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তলবে তিনি ঢাকায় যান। ঢাকায় থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামের একটি মামলার সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত থাকার জন্য কাগজ আসে।

“২৯ মে বুধবার সেই সাক্ষ্য হওয়ার কথা। বিষয়টি আমরা তাকে জানানোর পর তিনি রংপুরে না ফিরে চট্টগ্রামে যেতে চাইলে তাকে অনুমতি দেওয়া হয়।”

 বৃহস্পতিবার তিনি কাজে যোগ না দিলে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলে জানান শরিফুল আলম।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিদর্শক মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রংপুরে যায়নি। সেরকম কিছু পেলে তারা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।